আয়কর ছাড় ও কৃষিঋণ মকুবই শেষ অস্ত্র মোদির


স্মার্ট সিটি আপাতত পিছনের সারিতে। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার জয়গান অতীত। হাইভোল্টেজ উন্নয়নের প্রচার সত্ত্বেও তিন রাজ্যে পরাজয়ের ধাক্কায় হতচকিত বিজেপিকে পুরনো ফর্মুলারই শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। গত ৬৫ বছর ধরে যে মডেলকে আঁকড়ে ধরে প্রতিটি সরকারই নির্বাচনী বৈতরণী পেরতে চেয়েছে। অর্থাৎ ভোটের আগে জনমোহিনী ঘোষণা। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় আত্মবিশ্বাস এতটাই নাড়িয়ে দিয়েছে যে, আজ থেকেই সরকার ও দল ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে। একদিকে দলের সভাপতি অমিত শাহ দলের দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দলীয় পদাধিকারীদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে নিচুতলার খবর নিতে চাইলেন। নির্দেশ দিলেন আরও বেশি করে মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষের প্রকৃত সমস্যার রিপোর্ট পাঠাতে হবে। আবার অন্যদিকে সরকারপক্ষ বাজেটকেই ব্রহ্মাস্ত্র হিসাবে টার্গেট করে ভোট উপহারের তালিকা নির্মাণ শুরু করে দিল। এবার যদিও বাজেট হবে না। হবে ভোট অন অ্যাকাউন্ট। কিন্তু সরকার কোনও প্রকল্প ঘোষণা করতে পারবে না এমন কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। মধ্যবিত্তকে সন্তুষ্ট করতে আয়করে বিশেষ ছাড় ও নতুন করকাঠামোয় চাকুরিজীবীকে রেহাই দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। আর সবথেকে বিপদ যে অংশ থেকে সেই গ্রাম ও কৃষককে খুশি করতে একঝাঁক উপহার দেওয়া হবে। তিন রাজ্য যে উদ্বেগজনক বার্তা দিয়েছে, ঘুরপথে কৃষকদের মন পাওয়ার প্রয়াসে তার কোনও সমাধা হবে না। তা‌ই সরাসরি কৃষকদের বিপুলহারে ঋণমকুবের কথা ভাবা হচ্ছে। এর পাশাপাশি একটি সম্পূর্ণ নতুন রোজগার প্রকল্প নিয়েও সরকারের শীর্ষস্তরে চর্চা চলছে। ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি যেমন শুধুই গ্রামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, মোদি সরকার চেষ্টা করছে এমন কিছু চমক দিতে যা গ্রাম থেকে শহর গোটা দেশের সমস্ত গরীবের রোজগারে প্রভাব ফেলতে পারে। সেটা ঠিক কী ধরনের প্রকল্প সেই রূপরেখা জানা না গেলেও, গত বছরের একটি প্রস্তাবকেই আবার ফিরিয়ে আনা হবে কি না, সেই জল্পনাটি আজ দিনভর আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে রাজনৈতিক মহলের। গত বছরের বাজেটের আগে সরকার ও দলের মধ্যে থেকে একটি প্রস্তাব উঠেছিল । সেটি হল বেকার ভাতা চালু করা। প্রতিটি বিপিএল কার্ড থাকা কর্মহীন মানুষকেই মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ভাতা হিসাবে সরাসরি ট্রান্সফার করা। জনধন যোজনা তথা মুদ্রা ব্যাংকের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি রূপায়ণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কথা ছিল ওই প্রকল্পটি বাজেটেই ঘোষণা করা হবে। ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা করে দিতে গেলেও ২০ কোটি মানুষের জন্য অন্তত সাড়ে ৩ লক্ষ কোটি টাকা প্রয়োজন। তাই দলীয়স্তরে আলোচনা হলেও সেই প্রকল্প নিয়ে সরকার অগ্রসর হয়নি। প্রশ্ন উঠছে এবার কী সেই প্রকল্পটি নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে? নাকি অন্য কোনও রোজগার স্কিম আনা হবে। বিগত মাসগুলিতে একের পর এক উপনির্বাচন আর সম্প্রতি কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফল সবথেকে বড় যে আশঙ্কার বার্তা দিয়েছে, সেটি হল বিজেপির কাছে ২০১৪ সালে সমাজের প্রতিটি স্তরের যে ভোটব্যাঙ্ক এসেছিল, সেগুলিই হাতছাড়া হচ্ছে। কৃষক, দলিত, তফসিলির পাশাপাশি উচ্চবর্ণের যে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক মধ্য ছত্তিশগড়ে রয়েছে, সেই রায়পুর, ভিলাই, দুর্গের মতো জনপদগুলিতেও বিজেপি ভোট হারাচ্ছে। এটাই চিন্তার। কি কী কী কারণে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে? এই গ্রাউন্ড রিপোর্ট জানতে চাইছে শীর্ষ নেতৃত্ব। এবং নোট বাতিল থেকে জিএসটি— কোনও সিদ্ধান্তই যে মানুষকে খুশি করতে পারেনি তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তাই আগামী বাজেটে সরাসরি দেশবাসীকে উপহার দেওয়ার প্রক্রিয়া নেওয়া হতে পারে। আয়করে বড়সড় ছাড়, ঊর্ধ্বসীমার কাঠামো বদল, কৃষিঋণে মকুব এবং কৃষিঋণ প্রদানের নিয়মকানুন আরও শিথিল করা হবে। আর পেনশনপ্রাপ্তদের ক্ষোভ মেটাতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে সহজ করা তথা স্বল্পসঞ্চয়ে সুদের হার নিয়েও ভাবনাচিন্তা করা দরকার বলে মনে করতে শুরু করেছে সরকার। যদিও প্রশ্ন উঠছে, এই প্রতিটি সিদ্ধান্তই সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে সেটা এতদিন বোঝা গেল না কেন!