ঘরের মধ্যে রাতভর উনুন জ্বালিয়ে রাখায় পাণ্ডবেশ্বরে দমবন্ধ হয়ে দম্পতির মৃত্যু


আসানসোল: ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য বন্ধ ঘরে সারারাত উনুন জ্বেলে রাখায় দমবন্ধ হয়ে পাণ্ডবেশ্বরের এবিপিট কোলিয়ারির আবাসনে এক দম্পতির মঙ্গলবার মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের ১৭ বছরের ছেলে বাবলা ভুঁইয়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিস জানিয়েছে, মৃতদের নাম ছোটকু ভুঁইঞা (৪০) ও কোটাদেবী ভুঁইঞা (৩৬)। এদিন দুপুরে এলাকার বাসিন্দারা দরজা ভেঙে তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকদের অনুমান, বন্ধ ঘরে উনুন জ্বালানোর জন্য বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়েছিল। চারদিক বন্ধ থাকা ঘরে অক্সিজেনের অভাবেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। বন্ধ ঘরে আগুন জ্বালানো সবসময়ই বিপজ্জনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোটকুবাবু ইসিএলে কাজ করতেন। সোমবার থেকে ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় ওই রাতে আবাসনের একটি ঘরেই পরিবারের সকলে ঘুমাচ্ছিলেন। ঘরের জানালাও বন্ধ ছিল। তার ফলে বাইরে থেকে হাওয়া ঢুকতে পারেনি। ঘর গরম করতে সেখানে সন্ধ্যা থেকেই উনুনে আঁচ দেওয়া ছিল। সারারাত ধরে উনুন জ্বলার কারণেই এই বিপত্তি ঘটে। উনুনের ধোঁয়ায় ঘরের চারদিক ভরে গিয়েছিল।

আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, শীতকালে কখনওই বন্ধ ঘরে উনুন জ্বালানো উচিত নয়। ওই ঘরে উনুন জ্বলার ফলে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়েছিল। আগুন জ্বালানোর ফলে ঘরের মধ্যে অক্সিজেন কমে গিয়েছিল। তার ফলে দমবন্ধ হয়ে ধীরে ধীরে তাঁরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বিষাক্ত গ্যাস শরীরে প্রবেশ করলে নড়াচড়া করার ক্ষমতাও থাকে না। চেষ্টা করলেও উঠে দাঁড়ানো যায় না।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এদিন দুপুর পর্যন্ত ওই দম্পতি আবাসনের দরজা না খোলায় আমাদের সন্দেহ হয়। পরে আমরা বেশ কিছুক্ষণ ধরে ধাক্কাধাক্কি করলেও কেউ দরজা খোলেনি। বাইরে থেকে কোনও আওয়াজ শোনা যায়নি। পরে জানালা খুলে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে তিনজনই নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছোটকুবাবুর ভাই সমরা ভুঁইয়া বলেন, ওরা অন্যদিন সকালেই ঘুম থেকে উঠে যায়। প্রথমে ভেবেছিলাম, দরজা না খুললেও ওরা ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কাজ করছে। ঠান্ডার জন্য অনেকেই এদিন বাড়ি থেকে বের হয়নি। কিন্তু, দুপুরেও ওদের কাউকে বাড়ির বাইরে না দেখতে পেয়ে সন্দেহ হয়। তখনই দরজায় ধাক্কা দেওয়া হয়। পরে জানালা খুলে তাঁদের ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এলাকার বাসিন্দা সন্তোষ পাসোয়ান বলেন, শীতের সময় আমাদের এলাকার অনেকেই বাড়িতে উনুন জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু, এর পরিণতি এতটা ভয়ানক হতে পারে বলে ভাবতে পারিনি। শুয়ে থাকার মতো করে ওই তিনজন বিছানায় পড়েছিলেন। মারা গিয়েছেন বলে ভাবতে পারিনি। পরে নাকের কাছে হাত দিয়ে বোঝা যায়, তাঁরা দু'জন মারা গিয়েছেন। তাঁদের ছেলেও কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। সে বেহুঁশ অবস্থায় রয়েছে।

চিকিৎসকরা বলেন, এ ধরনের ঘটনা শিল্পাঞ্চালে আগেও হয়েছে। বন্ধ ঘরে উনুন না জ্বালানোর জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়। তারপরেও ভুল করে এই কাজ অনেকেই করে বসেন। তার ফলে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।