কম ওজনের যমজ শিশুকে বাঁচিয়ে নজির গড়ল চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল


মালদহ: কম ওজনের যমজ শিশুকে বাঁচিয়ে নজির গড়ল মালদহের চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। টানা ৭৩ দিন লড়াইয়ের পর ওই যমজ শিশুর ওজন বাড়িয়ে মা সুলতানা বিবির মুখে হাসি ফুটিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছেন চিকিৎসকরা। জন্মের সময় যমজ শিশুর মধ্যে একটির ওজন ছিল ৭৫০ গ্রাম। অপর শিশুটির ওজন ছিল ১ কেজি ৩০০ গ্রাম। চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে প্রতিষ্ঠানিক প্রসবে এই প্রথম কম ওজনের যমজ শিশুর জন্ম নেওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসকদের তৎপরতায় যমজ শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেল। স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতালের চিকিৎসকদের এই সাফল্যে বিভিন্ন মহলে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্য, ৭৫০ গ্রাম ওজনের শিশু জন্ম নিলে বাঁচার আশা খুব কমই থাকে। তবে এক্ষেত্রে শিশুর শুশ্রূষা এবং নজরদারিতে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

এবিষয়ে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হাসপাতলে এর আগে একাধিক যমজ শিশুর জন্ম নিয়েছিল। যদিও এই প্রথম কম ওজনের জমজ শিশু জন্ম নেওয়ার পর আমরা সুস্থ করে ওজন বাড়িয়ে বাড়ি পাঠিয়েছি। জন্ম নেওয়ার সময় যমজ শিশুর মধ্যে একটির ওজন ছিল ৭৫০ গ্রাম। বেসরকারি কোনও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ওই শিশুকে বাঁচাতে গেলে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হতো। এক্ষেত্রে সেটা এই হাসপাতালেই চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া আগে থেকে এখন হাসপাতালে মা ও শিশুদের ভালো পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানিক প্রসবে নরমাল ডেলিভারি ও সিজার অনেকটাই বেড়েছে। চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটের ইনচার্জ সুদীপ মণ্ডল বলেন, চাঁচলের এক প্রসূতি মহিলা প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি যমজ শিশুর জন্ম দিলে শিশুদের ওজন কম হওয়ায় বাঁচার আশা খুব কম ছিল। আমরা শিশু দু'টিকে ভেন্টিলেশনে রেখে শুশ্রূষা করেছি। কম ওজন নিয়ে শিশুর জন্ম হলে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে শিশুদের শ্বাস প্রশ্বাসজনিত সমস্যা হয়েছিল। টানা ৭৩ দিন রেখে ওজন অনেকটা বাড়িয়ে সুস্থ করা গিয়েছে। যমজ শিশুর মা সুলতানা বিবি বলেন, চিকিৎসকদের কাছ থেকে কম ওজনের শিশুর কথা শুনে আতঙ্কিত হয়েছিলাম। যদিও তাদের সাহায্যে সুস্থ শিশু পেয়েছি। হাসপাতালে টানা ৭৩ দিন থাকায় গোটা হাসপাতালকে পরিবারের মতো মনে হচ্ছিল। চিকিৎসক ও নার্সদের অবদানের কথা ভুলব না। তাঁদেরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁচল ১ ব্লকের খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের মহাদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা সুলতানা বিবি গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ওইদিনই তিনি স্বাভাবিক প্রসবে যমজ সন্তানের জন্ম দেন। তবে শিশু দু'টি স্বাভাবিক ওজনের চাইতে কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়। এতে শিশুদের বাঁচিয়ে তোলা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জন্মের সময় শিশু দুটির মধ্যে একটির ওজন ছিল ৭৫০ গ্রাম অপরটি ছিল ১ কেজি ৩০০ গ্রামের। কম ওজন হওয়ায় যমজ শিশু দুটি শ্বাস প্রশ্বাস জনিত সমস্যা এবং জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। পরে চিকিৎসকরা শিশু দু'টিকে ভেন্টিলেশনে রেখে ওজন বাড়ায়। ডিসচার্জের সময় যমজ শিশুর মধ্যে কম ওজনের শিশুটির ওজন দাঁড়িয়েছে দেড় কেজি এবং অপর শিশুটির ওজন হয়েছে ২ কেজি ৬৫ গ্রাম। সোমবার শিশুর মা সুলতানা বিবিকে যমজ শিশুর সঙ্গে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।