মৃতের হাতে লেখা নম্বরই ধরিয়ে দিল ধর্ষক খুনীকে

প্রতিবাদ: কয়েক মাসের ব্যবধানে দুই তরুণীকে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগ ওঠায় পথে মহিলারা। শুক্রবার হেলাপাকড়িেত। 


বাঁ হাতের তালুতে লেখা একটি মোবাইল নম্বর। সেই নম্বর থেকেই ময়নাগুড়িতে তরুণীকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার তদন্তের সূত্র পেল পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ যখন ওই তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করে তখন তদন্তকারী অফিসারের চোখ পড়ে নির্যাতিতার হাতের তালুতে। সঙ্গে সঙ্গে ডায়েরিতে তুলে রাখা হয় নম্বরটি। পরে যখন ওই নম্বরটির কল রেকর্ড বের করা তখন ঘটনা পরিষ্কার হয়ে যায় পুলিশের কাছে। ওই নম্বরের টাওয়ার লোকেশন ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে ওই তরুণীর প্রেমিক কোথায় লুকিয়ে রয়েছে। সন্ধেয় সেই লোকেশন অনুযায়ী খোঁজ চালিয়ে পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করে। 

পুলিশের দাবি, ধৃত যুবকের সঙ্গে ওই তরুণীর বেশ কিছুদিন সম্পর্ক ছিল। তবে ইদানীং ওই প্রেমের সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। যার জেরেই ওই তরুণীকে খুন হতে হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় ওই যুবক জানিয়েছে, সে চ্যাংরাবান্ধায় একটি গ্যারাজে মেকানিকের কাজ করত। তার প্রেমিকা যে মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করত সেটি সে-ই তাকে কিনে দিয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে তার প্রেমিকা তাকে এড়িয়ে যাচ্ছিল।  ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার প্রেমিকা ওই ফোনে অন্য কারও সঙ্গে ব্যস্ত থাকত বলে সন্দেহ দানা বাঁধছিল যুবকের মনে। এ নিয়ে আগেও বেশ কয়েকবার দু'জনের মধ্যে ঝামেলা হয়। বুধবার সকালেও ওই মোবাইল ফোনকে কেন্দ্র করেই দুজনের মধ্যে ঝগড়া বাধে।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই যুবক পুলিশকে জানিয়েছে, বুধবার সকালে সে যখন তার প্রেমিকাকে ফোন করে তখনও দীর্ঘক্ষণ সে ফোনে ব্যস্ত ছিল। পরে ফোন করে প্রেমিকাকে ব্যস্ত থাকার কারণ জানতে চাইলে তার প্রেমিকা রাগের বশে চ্যাংরাবান্ধার ওই গ্যারাজে গিয়ে ফোনটি যুবককে ফিরিয়ে দেয়। তবে তার আগে ওই যুবকের মোবাইল নম্বরটি নিজের বাঁ হাতের তালুতে টুকে রাখে। বিকেলে ওই যুবক মেয়েটির মায়ের নম্বরে ফোন করে ও তাকে বাড়ির বাইরে বের হতে বলে। প্রেমিকের ডাকে ওই তরুণী বাইরে বের হতেই তাকে বাঁশঝাড়ের কাছে নিয়ে যায় ওই যুবক। তারপর সেখানে আটকে রেখে তাকে ধর্ষণ ও খুন করে সে।

ওই তরুণীর দাদা এদিন বলেন, ''বোনকে দেখতাম সবসময় মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত। শেষ পর্যন্ত ওই মোবাইলই যে ওর জীবনে কাল হবে কে জানত!'' তরুণীর মা-ও বলেন, ''বুধবার বিকেলে আমার মোবাইলে একটি অচেনা নম্বর থেকে বারবার ফোন আসছিল। মেয়ে আমার কাছ থেকে মোবাইলটি নিয়ে একজনের সঙ্গে কথাও বলে। আমি বিষয়টিকে সে সময় অতটা গুরুত্ব দিইনি।''

জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ''জেরায় ওই যুবক স্বীকার করেছে সে-ই মেয়েটিকে খুন করেছে। কিন্তু ওই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না পুলিশ তা নিশ্চিত হতে চাইছে। তাই ওই যুবককে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।''