হারিয়ে যাওয়া মাকে ফেসবুকের মাধ্যমে ফিরে পেলেন ছেলে


চুঁচুড়া: ব্যান্ডেল স্টেশনে নেমে নৈহাটি যাওয়ার ট্রেন ধরার মাঝেই হারিয়ে গিয়েছিলেন মা। স্টেশন চত্বরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মাকে না পেয়ে রেল পুলিসে নিখোঁজ ডায়েরিও করেছিলেন ছেলে। মাকে খুঁজে দিলে পুরস্কার ঘোষণা করে স্টেশন চত্বরে পোস্টার সেঁটে দিয়েছিলেন ছেলে। কিন্তু, কোনও কিছুতেই কিছু হয়নি। তবে ফেসবুকের দৌলতে ১০ দিন বাদে মায়ের সন্ধান পেয়ে তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন ছেলে। অবশেষে ছেলে ও পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে এসে যারপরনাই খুশি যামিনীদেবী। ফেসবুক মা-ছেলেকে মিলিয়ে দিলেও শীতের এই কটা দিন চুঁচুড়ার সায়রা মোড়ের জুনিয়র বালক সঙ্ঘের পুত্রপ্রতিম সদস্যরা তাঁকে খুব আপন করে নিয়েছিলেন। তাই নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আনন্দঘন মুহূর্তেও বৃদ্ধার চোখ দু'টি জলে ভরে উঠেছিল। 
যামিনীদেবীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর দেশের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের চাতরা জেলার গ্রামে। ছেলে কর্মসূত্রে কল্যাণীতে থাকেন। দেশের বাড়ি থেকে ছেলের কল্যাণী সীমান্তের বাড়ি ফিরছিলেন ষাটোর্ধ্ব যামিনীদেবী। সঙ্গে ছিলেন জামাই ও ছেলে। ডাউন ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেস থেকে ব্যান্ডেল স্টেশনে নামার পরই ছেলে ও জামাইকে হারিয়ে ফেলেন তিনি। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে চুঁচুড়ার সায়রা মোড় জুনিয়র বালক সঙ্ঘের কাছে হাজির হন। সেখানে তাঁকে অগোছালভাবে ঘুরতে দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। তিনি তাঁর নাম ও কল্যাণী সীমান্ত ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেননি। এরপর ক্লাবের সদস্যরা এলাকার তৃণমূল নেতার দ্বারস্থ হন। এরপর তিনি ক্লাবের ছেলেদের নিয়ে চুঁচুড়া থানায় যান।

কিন্তু, পুলিস ওই মহিলাকে কল্যাণী সীমান্ত লোকালে তুলে দেওয়ার কথা বলে দায় সারে বলে অভিযোগ। এরপরেই ক্লাবের সদস্যরা মানবিকতার খাতিরে বাড়ির লোককে না খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত ক্লাবের একটি ঘরে তাঁকে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে, ২৬ নভেম্বরই মহিলার পরিবারের লোকেরা ব্যান্ডেল জিআরপিতে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পাশাপাশি তাঁকে খুঁজে দেওয়ার জন্য ৫০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ব্যান্ডেল স্টেশন চত্বরে পোস্টার মারেন। ফেসবুকেও ছাড়া হয় সেই পোস্টার। পাশাপাশি আশ্রয়দাতা ক্লাবের সদস্যরাও নিখোঁজের সন্ধান জানাতে ফেসবুক-হোয়াটস অ্যাপে তাঁর ছবি দিয়ে ছড়িয়ে দেয়। ফেসবুকের সেই পোস্ট দেখেই খবর যায় ছেলের কাছে। তাতে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে এদিন সায়রা মোড়ে উপস্থিত হন বৃদ্ধার পরিজনরা। শুরু হয় দু'পক্ষের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়। কিন্তু, এই কদিনে জুনিয়র বালক সঙ্ঘের সদস্যদের ঘরের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন বৃদ্ধা। তাই ঘরের মানুষকে ঘরে ফেরাতে কি আর টাকা নেওয়া যায়! তাই যামিনীদেবী পরিবার তাদের ঘোষণামতো ৫০০০ টাকা দিতে চাইলেও করজোড়ে সেই টাকা নিতে অস্বীকার করেন ক্লাবের সদস্যরা। তবে তাঁদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পাড়ার ও বৃদ্ধার পরিবারের সদস্যরাও।