কন্যাশ্রী কলম, পেনসিল থেকে জন্ম নেবে গাছ


কলম, পেনসিল থেকে গজাবে গাছ। হবে ফুল, ফল। ইতিমধ্যেই বিশ্ববাজারে এসেছে অভিনব এই '‌কন্যাশ্রী কলম'‌। তৈরি করছেন পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য এবং কন্যাশ্রীরা। যা প্রশংসা কুড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিরও। বিশ্ববাংলা লোগো দিয়ে বিশ্ববাংলা স্টলে এই '‌কন্যাশ্রী কলম' বিক্রি করবে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ দপ্তর। বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে দিতে  উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য ‌‌‌‌সরকার।

মাত্র পাঁচ টাকা দামের এই কলমের অভিনবত্ব হল, কালি শেষ হওয়ার পর রিফিল মাটি পুঁতে দিলেই গজিয়ে উঠবে গাছ। কিছুদিনের মধ্যে এই গাছ থেকে ফুল অথবা ফল পেয়ে যাবেন কলমের মালিক। আর এই অভিনবত্বই বিশ্ববাংলা স্টলে জায়গা করে দিয়েছে এই কলমকে।

সম্প্রতি পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তখনই তিনি এই কলমের কথা জানতে পারেন। পরিবেশবান্ধব এই কলম গাছ দেখে উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী এর নামকরণ করে বিশ্ববাংলা স্টলে জায়গা পাকা করে দেন। সরকারি দপ্তরগুলিতেও এই কলম ব্যবহার করার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকের শেষে তিনি ও মুখ্য সচিব মলয় দে এই কলমের দুটি রিফিল মাটিতে পুঁতে দিয়ে যান।

এই কলমের রহস্য হল– এটি তৈরি হয় বিশেষ এক ধরনের কাগজ দিয়ে। রিফিলের সঙ্গে বিভিন্ন ফুল, ফলের গাছের উন্নত ধরনের বীজ থাকছে। বীজ তৈরি করে দিচ্ছেন ১০০ দিনের কাজে যুক্ত কর্মীরা। আর কলম তৈরি করছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। পঞ্চায়েতের আনন্দধারা প্রকল্প থেকে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘর। সম্পূর্ণ হাতে তৈরি এই কলম থেকে সপ্তাহে এখন আয় হয় ৫ হাজার টাকা। বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গেলে এই আয় তিন গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কর্মীরা। ইতিমধ্যেই পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য এবং কন্যাশ্রীদের কাছে আরও বরাত আসা শুরু হয়েছে। উপহার দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থা কিনেও নিয়ে যাচ্ছে।

এই কলমগুলিতে ভরা আছে শাল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, কার্পাস, পেয়ারা, পেঁপে গাছের বীজ। এসব গাছের বীজ পুঁতলে খুব একটা পরিচর্যা করতে হয় না। অথচ চারা গজিয়ে বেড়ে উঠতে থাকে।

এই কন্যাশ্রী কলমের আবির্ভাব বেশ চমকপ্রদ। পুরুলিয়ার শিল্পমেলায় এই কলমের খোঁজ পান জেলার প্রোজেক্ট ম্যানেজার মৌমিতা মাহাতো। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, শম্পা রক্ষিত সেন নামে একজন মহিলা কেরল থেকে এই কলম তৈরির কৌশল শিখে এসে মেলায় বিক্রি করছেন। রঘুনাথপুরের মহকুমা শাসক আকাঙ্ক্ষা ভাস্করের কাছে বিষয়টি বলেন মৌমিতা। সঙ্গে সঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে গিয়ে এই কলম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তৈরি হচ্ছে পেন্সিলও। ব্লকের ৩২ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এদের মধ্যে ১৪ জন কন্যাশ্রী।
আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর বলেন, '‌এই কলম বিক্রি করে প্রথমে সপ্তাহে ৫০ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তারপর ২ হাজার এবং এখন ৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। যেভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে তাতে আয় দ্রুত বাড়বে।'‌ রাজ্যের সব শিল্পমেলাতেও এই কলম বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাড়া ব্লকের বিডিও অনিরুদ্ধ ব্যানার্জি বললেন, 'ইতিমধ্যেই আমরা বিভিন্ন মেলায় এই কলমের সন্ধান নিয়ে পৌঁছে গেছি। অসম্ভব ভাল সাড়া পেয়েছি। সবলা মেলাগুলিতেও এই কলম পাওয়া যাবে।‌'‌  রোজই এই কলমের চাহিদা বাড়ছে।
শুধু স্বনির্ভর গোষ্ঠীই নয়, পঞ্চায়েত দপ্তরও এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সম্প্রতি পঞ্চায়েতের প্রধান দপ্তরে এই কলমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেছেন দপ্তরের মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি।‌‌ তিনি বলেন,'‌খুব ভাল উদ্যোগ। এ ভাবে বিভিন্ন অভিনব প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোকে যদি চাঙ্গা করা যায়, তবে তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ হবে। '‌কন্যাশ্রী কলম'‌ শুভ উদ্যোগ, অভিনব উদ্যোগ।‌'‌‌