পাটকাঠি, চাল-ডালের বিনিময়ে শান্তিপুরে বিকোয় অবৈধ মদ


শান্তিপুর : পাটকাঠির বদলে বিকোয় অবৈধ মদ। নেশা করতে সংসারের জিনিসপত্র বিক্রি করতে বা বন্ধক রাখতেও পিছুপা হয় না শান্তিপুর চৌধুরিপাড়ার পুরুষ ও মহিলারা। পকেটে পয়সা না থাকলেও কুছ পরোয়া নেই। থালা-বাটি, চাল-ডাল হাতের কাছে যা পায় তাই নিয়েই চলে যায় মদের দোকান। শান্তিপুরে বিষমদে মৃত্যুর ঘটনায় সামনে এল এই তথ্য। সেখানে বিষমদ খেয়ে দশজনেরও বেশি মারা গেছে। এই বিষমদ সরবরাহের কিংপিন গোপালকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে CID। মৃত্যুর পরই মৃতের পরিবারের কাছে পৌঁছে গেছে সরকারি আর্থিক সাহায্য। সমস্ত রাজনৈতিক দল মৃতদের পরিবারকে জানিয়ে এসেছে সমবেদনা। ইনাডু বাংলার তরফে যাওয়া হয় শান্তিপুরের চৌধুরিপাড়ায়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মৃতের পরিবারের আত্মীয়দের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন এই মদ খেতেন তারা?

এই বিষয়ে এলাকার এক প্রাক্তন শিক্ষক বলেন, "যারা এখানে মদ খায় তারা দরিদ্র দিনমজুর। কেন নেশা করে বলতে পারব না। কিন্তু দোকানের মদ কিনে খাওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। এখানে পাঁচটাকা, দশটাকার প্যাকেটে মদ পাওয়া যায়। হাতের কাছেই। সেই কারণে এই মদের কারবারের রমরমা। "এলাকার পোস্ট অফিসের এক প্রাক্তন কর্মচারী বলেন, "এখানে বাকিতে মদ বিক্রি হয়। পকেটে পয়সা না থাকলেও বাকিতে মদ পাওয়া যায়। টাকা দিতে না পারলেও পাটকাঠি বা চাল-ডালের বিনিময়ে মদ পেয়ে যায় এখানকার লোকজন।"

সত্যিই কি পাটকাঠি বিনিময়ে মদ কেনা যায় ? এই বিষয়ে এক মৃতের আত্মীয় বলেন, "এসব ভুল কথা। আমি কোনওদিন শুনিনি টাকা ছাড়া অন্য কিছুর বিনিময়ে মদ পাওয়া যায়।" বিষমদ খেয়ে মারা গেছে গোলাপচাঁদ মাহাতর মা কৃষ্ণা মাহাত ও ভাই ভালো মাহাত। গোলাপচাঁদকে মদ বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি প্রথমে বলেন, "শুধু পাটকাঠি কেন, বাড়ির চাল-ডাল এমনকী থালা-বাটি বিক্রি করেও এখানে লোকজন মদ খায়। কার কার কথা বলব? মদ খেয়ে আমার মা ও ভাই মারা গেছে। তবে ওরা কিছু বিক্রি করে খায়নি।"এই বিষয়ে কিছু বলতে চায়নি এলাকায় মদ বিক্রি করা গোপালের পরিবার। তবে তাদের বাড়িতে মজুত করা ছিল প্রচুর পাটকাঠি। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বললেন, "প্রশাসন তো সব জানে। প্রশাসন চাইলে কি এই মদ বিক্রি বন্ধ করতে পারে না। প্রতিটি পাড়ায়, ঘরে ঘরে এই মদ বিক্রি ঢুকে গেছে। প্রশাসন চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু কিছু করে না। যে জায়গায় মদ কিনতে টাকা লাগে না, বাকিতে বা বাড়ির সামগ্রীর বিনিময়ে মদ পাওয়া যায়, সেখানে মদ ব্যবসার রমরমা হবে, এটাই স্বাভাবিক। প্যাকেট প্রতি দাম মাত্র ১০ টাকা। এখন মদ বিক্রি বন্ধে পুলিশ তৎপরতা দেখালেও ক'দিন পরে ফের সব ঢিলেঢালা হয়ে যাবে। তখন ? মদ বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন।"