রাফাল চুক্তিতে গলদ নেই, কোনও তদন্ত নয়, জানাল সুপ্রিম কোর্ট, স্বস্তিতে কেন্দ্র

রাফালে গলদ নেই।

রাফাল নিয়ে শীর্ষ আদালতে স্বস্তি পেল মোদী সরকার। তদন্তের দাবি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। সাফ জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত।

রাফাল মামলা খারিজ করে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের মন্তব্য, ''যুদ্ধবিমান কেনার প্রযুক্তিগত এবং পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।'' একই সঙ্গে বিচারপতিরা বলেন, ''এমন কোনও তথ্যগত প্রমাণ আমরা খুঁজে পাইনি, যাতে মনে হয় যে কাউকে বেআইনি ভাবে সুবিধা দেওয়া হয়েছে।'' আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ।

ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শীর্ষ আদালতে একাধিক মামলা দায়ের হয়। দাবি উঠেছিল, আদালতের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্তের। গত ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রের কাছে রাফালের দাম সংক্রান্ত তথ্য জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। টানা শুনানির পর শুক্রবার চূড়ান্ত রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কতগুলি যুদ্ধবিমান লাগবে, তার গুণমান বা প্রযুক্তিগত বিষয় কী হবে, সেই সব বিষয় আদালতের বিচার্য বিষয় নয়।

তবে এই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। এমনকি, এই রায় 'ভুল' বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রায়ের পর তিনি বলেন, ''এই রায় ভুল। কোনও ডিল বা চুক্তি নিয়ে দুর্নীতি বা বেনিয়মের অভিযোগ উঠলে, আদালতের উচিত তার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া। কিন্তু আদালত তা করল না।''

তবে যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনও ত্রুটি বা গলদ খুঁজে পায়নি আদালত। অফসেট পার্টনার হিসাবে অনিল অম্বানীর সংস্থা রিলায়েন্সকে ঠিক করার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে,  অফসেট পার্টনার ঠিক করেছে বরাতপ্রাপ্ত ফ্রান্সের সংস্থা দাসো এভিয়েশন। তাই এ নিয়ে প্রশ্ন তোলাও ঠিক নয়।

কিন্তু প্রশান্ত ভূষণ প্রশ্ন তুলেছেন, এয়ার ফোর্স জানিয়েছিল কমপক্ষে ১২৬টি যুদ্ধবিমান প্রয়োজন। কিন্তু মোদি ফ্রান্সে গিয়ে ৩৬টি যুদ্ধবিমানের চুক্তি করলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াও সঠিক ভাবে মানা হয়নি। দামও মোদী নিজে বাড়িয়ে দিয়েছেন। অফসেট পার্টনার প্রসঙ্গে প্রশান্ত ভূষণের যুক্তি, চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়া অফসেট পার্টনার ঠিক করতে পারবে না দাসো। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে  অন্ধকারে রেখেই দাসো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, সিল করা খামে শীর্ষ আদালতে তথ্য জমা দিয়েছিল সরকার। সেটা কেউ দেখতে পায়নি। সরকার কী তথ্য দিয়েছিল, আর আদালত কী বুঝেছে, তা তারা দু'পক্ষই জানে।''

রাফাল নিয়ে রাহুল গাঁধী তো বটেই, অন্য বিরোধীরাও লাগাতার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে। এমনকি, সাম্প্রতিক পাঁচ রাজ্যের ভোটে বিজেপি বিরোধী প্রচারে রাফালকে হাতিয়ার করেছেন রাহুল গাঁধী। সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগে শীর্ষ আদালতের এই রায়ে বিরোধীদের সেই অস্ত্র কিছুটা হলেও ভোঁতা হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।