বাংলাদেশ নির্বাচন: শেষ হাসি হাসলেন হাসিনাই


পদ্মাপারে ভোট হল মূলত উৎসবের পরিবেশেই। কিন্তু গোলমালও হয়েছে। ভোট–হিংসার বলি ২২ জন। ভোট শেষ হওয়ার পর শুরু হয়েছে গণনা। ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই ছবি মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রতিপক্ষের থেকে অনেকটাই এগিয়ে যায় শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ। ফলে টানা তৃতীয়বার বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসতে চলেছেন তিনি। এই নিয়ে চারবার। তবে এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুনভাবে নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধানে ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিরোধীরা।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হচ্ছে ২৯৯ আসনে। বেশির ভাগ আসনেই জয়ী আওয়ামি লিগ। সরকারিভাবে ঘোষণা না হলেও বেসরকারিভাবে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই আওয়ামি লিগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট জিতে গিয়েছে ২৪৯টি।এরশাদের জাতীয় পার্টি ১টিও আসন জিততে না পারলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিএনপি জোট ৬টিতে জয়লাভ করেছে বলে খবর। ৬টিতে জয়ী হয়েছেন অন্যরা।

গোপালগঞ্জ–৩ আসনে শেখ হাসিনা জয়ী হয়েছেন। আড়াই লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতে গেছেন বাংলাদেশের একদিনের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তুজা। এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামি লিগের সব মন্ত্রীই। পিরোজপুর–২ আসনে পৌনে ২ লাখ ভোটে জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশের জলসম্পদমন্ত্রী আনওয়ার হোসেন মঞ্জু।

একের পর এক আসনে আওয়ামি লিগের প্রার্থীদের বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার খবর মিলতেই ধানমন্ডি এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামি লিগ কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমতে শুরু করে। ঢাকা–সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় বিজয়মিছিল।

রাতে ভোটবর্জনের কথা ঘোষণা করে বিএনপি। দলের মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির এবং ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেন সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, '‌একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিষ্ঠুর প্রহসন। এ ধরনের নির্বাচন জাতির জন্য ক্ষতিকর। এই ক্ষতি দীর্ঘকালের। এই নির্বাচনে জাতির ক্ষতি হয়ে গেল। এর চেয়ে খারাপ ভোট আর হয় না। আমরা ভোট বর্জন করলাম। নির্বাচন কমিশনকে এটা আমরা জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই ফলাফল বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধানে নতুন করে ভোটের দাবি করছি।'‌

এদিন অর্থাৎ বছরের শেষ রবিবার বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ এবং রক্তপাতের মধ্যে দিয়েই শেষ হয় বাংলাদেশের ভোট। সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটে পর্যন্ত হয় ভোটদান। নিহতদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে পুলিসের গুলিতে। বাকিরা মারা গিয়েছেন সংঘর্ষে। পুলিসের তরফেই একথা জানানো হয়েছে। কুমিল্লায় দুজন, চট্টগ্রাম, রাজশাহি, দিনাজপুর, রাঙামাটি, কক্স বাজার এবং বগুরায় একজন করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এক পুলিসকর্মীর উপর আগ্নেয়াস্ত্র এবং লাঠি নিয়ে বিএনপি সমর্থকরা চড়াও হলে মৃত্যু হয় তাঁর। কুমিল্লার চাঁদিনার একটি বুথে বিএনপি সমর্থকরা হামলা চালায়। এরপর বাধা দিতে গেলে তাদের উপরই চড়াও হয় হামলাকারীরা। পুলিসের দাবি, আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি চালালে মারা যান জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের সমর্থক মুজিব। কুমিল্লারই মুরগাঁওয়ে ভোটবুথে শাসক–বিরোধী সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে বিএনপি–র বাচ্চু মিঞার। 
রাঙামাটির কাউখালি উপজেলায় আওয়ামি লিগ–বিএনপি সংঘর্ষে যুব লিগের গাগরা শাখার সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ বশিরুদ্দিনকে মাথায় লাঠির বাড়ি মারলে মৃত্যু হয় তাঁর। জখম হয়েছেন আরও ১০ জন। দিনাজপুর এবং চট্টগ্রামের পশ্চিম মালিয়াপাড়াতে দুই দলের সমর্থকদের গন্ডগোলের মাঝে পড়ে মৃত্যু হয় দুই সাধারণ নাগরিক, ৬৩ বছরের কিনা মহম্মদ এবং যুবক আবু সাদেকের। রাজশাহির মোহনপুরে আওয়ামি লিগের মেরাজুদ্দিনকে খুনের অভিযোগ বিএনপি–র বিরুদ্ধে। কক্স বাজার–১–এর রাজাখালি মাতব্বরপাড়ার ভোট কেন্দ্রে বাংলাদেশ ছাত্রলিগের নেতা, ২৩ বছরের মহম্মদ আবদুল্লা মারা যান বিএনপি–র সঙ্গে সংঘর্ষে। নোয়াখালিতে একটি প্রাথমিক স্কুলের ভোট বুথে জামাত এবং শিবির দলের গন্ডগোল থামাতে গিয়ে মৃত্যু হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা আনসার বাহিনীর সদস্য নুরুনবির।

এদিন সকাল আটটায় ভোটদান শুরু হতেই ঢাকা সিটি সেন্টার ভোটবুথের প্রথম ভোটার হিসেবে ভোট দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ওই কেন্দ্রে আওয়ামি লিগের প্রার্থী হাসিনার আইনজীবী ও আত্মীয় ফজলে নুর তাপস।