কোহলির দলটা সৌরভের ভারতের মতো নয়


মহিলাদের টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের পারফরমেন্স দেখে মন ভরে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো ভারতও সহজেই সেমিফাইনালে উঠে গেছে। এবার শেষ চারে কাদের সামনে পড়তে হবে, তার জন্য অন্য গ্রুপের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত যাই হোক না কেন, ভারতীয় দল কিন্তু প্রমাণ করছে, এবার মহিলাদের আইপিএল চালু করার সময় হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ ইতিমধ্যেই রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। এবার বিশ্বের সবথেকে বড়, ধনী এবং সফল ক্রিকেট লিগেও মহিলা সংস্করণ শুরু হওয়াটা সময়ের অপেক্ষা।

অন্যদিকে ভারতের ছেলেদের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছিল, এই বছরটা ক্রিকেট ইতিহাসে সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ। সেই তাৎপর্যপূর্ণ মরশুমের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ হারার পর বছরটা সত্যিই হতাশাজনক। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় যদি ভারত সিরিজ জিতে ফিরতে পারে, তা হলে আগে কী হয়েছে, সবাই ভুলে যাবে। আমরা যখন বিদেশ সফরে যেতাম, সিনিয়ররা বারবার বলত, সফরের শেষ দিকে, বা শেষ টেস্টে আমরা কী করব, সেটাই সবাই মনে রাখবে। প্রথম পর্যায়ের কথা কেউ মাথায় রাখবে না। ধরা যাক, পাঁচ ম্যাচের সিরিজের প্রথম তিনটে টেস্টে কোনও ব্যাটসম্যান প্রত্যেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করল, বা কোনও বোলার বেশ কয়েকবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেল। কিন্তু সেই ব্যাটসম্যান বা বোলার যদি শেষ দুই টেস্টে, বিশেষ করে শেষ টেস্টে ব্যর্থ হয়, তা হলে তাদের ব্যর্থই বলা হবে। এমনকী যদি গোটা সিরিজে তারাই সবথেকে বেশি রান করে, বা উইকেট পায়, তা হলেও। ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের স্মৃতিশক্তি এতটাই কম। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা আর ইংল্যান্ডের কাছে হারের পরেও যদি অস্ট্রেলিয়াকে ভারত হারাতে পারে, তা হলে বছরটা দারুণ বলে ধরে নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই বলা হচ্ছে, অল্পের জন্য এই দুটো সিরিজে ভারত হেরেছে, ভারত যথেষ্ট লড়াই করেছে, ইত্যাদি। কিন্তু আসল কথা হল, ভারত হেরেছে। এক রানে হারতে হলেও সেটা হারই।

স্টিভ স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নার মার্চ পর্যন্ত নির্বাসিত। ফলে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের জন্য টেস্ট সিরিজ জেতার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে ভারতের সামনে। কথা উঠছে স্মিথ, ওয়ার্নারহীন অস্ট্রেলিয়া দুর্বল। কিন্তু তাতে ভারতের কিছু করার নেই। বিপক্ষ যে দল নামাবে, তাদের বিরুদ্ধেই খেলতে হবে। এটা সহজ ব্যাপার। তাই ওসব না ভেবে ভারত মাঠে নেমে ভাল খেলে জিতুক। রোহিত শর্মা আবার টেস্ট দলে ফিরেছে। এখন দেখার, ভারত ছয় ব্যাটসম্যানে খেলে, নাকি অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে যেরকম পাঁচ বোলার, পাঁচ ব্যাটসম্যানে খেলেছিল, সেরকম খেলে। এখানে সমস্যা হল, এই ভারতীয় দলটা সৌরভ গাঙ্গুলির ভারতের মতো নয়। সৌরভের দলে ভারতের অধিকাংশ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান বলও করতে পারত। শেহবাগ যথেষ্ট ভাল অফ স্পিনার। শচীন প্রায় সবরকম বল করতে পারত। আর সৌরভ নিজে স্টাম্প টু স্টাম্প বল করে ব্যাটসম্যানকে পারস্ত করতে পারত। ওর দেরিতে স্যুইং করা বলগুলোও ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাত। কোহলির দলে টপ অর্ডারে একজনও নেই, যে বল করতে পারে। তাই ৪ জন বোলারে খেলা যাবে কিনা, সেটা নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন সবসময়ই থাকে। তবে ইংল্যান্ড সফরে ওভাল টেস্টে ঋষভ পন্থের সেঞ্চুরি বুঝিয়ে দিচ্ছে, ছয় নম্বরে একজন সত্যিকারের ব্যাটসম্যান ভারত পেয়েছে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, এটা ঋষভের প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফর। অনেক ক্রিকেটারেরই অস্ট্রেলিয়ার গতি আর বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে। যখন মানিয়ে নেয়, তখন হয়তো সিরিজই শেষ হয়ে গেছে এবং দল হেরে গেছে।

তিনটি সফরেরই পরিকল্পনা খুব সাধারণ মানের ছিল। আশা করব, এটা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে অনেক বেশি প্রস্তুত হয়ে ভারত এইসব দেশে সফরে যাবে। সূচি এমন ভাবে তৈরি করা হবে, যেন ভারত বিজয়ী হয়ে দেশে ফিরতে পারে।‌