রবিনসন কাণ্ডের ছায়া সল্টলেকে, ১৮ দিন ধরে মৃত মায়ের দেহ আগলে রাখল ছেলে


কলকাতা: সল্টলেক বি ই ব্লকে মায়ের মৃতদেহ ১৮ দিন ধরে আগলে রাখল ছেলে। রবিবার রাতে ঘটনাটি জানাজানি হতেই ওই বাড়ি থেকে মৃতার পচাগলা দেহ উদ্ধার করেছে পুলিস। ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছেলে মৈত্রেয় ভট্টাচার্য জানিয়েছে, তাদের পরিবার খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। তাঁর মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল, তিনি মারা যাওয়ার ২১ দিন পর তাঁকে মাটিতে পুঁতে দিতে। সেই মতো মা কৃষ্ণা ভট্টাচার্যের দেহ পুঁতে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিল ছেলে মৈত্রেয়। কিন্তু, একা সেই কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সাহায্য চাইতে রবিবার বিডন স্ট্রিটে এক পরিচিতর বাড়িতে গিয়েছিল। ওই পরিচিতরাই বিধাননগর উত্তর থানাকে খবর দেন। পুলিস বিডন স্ট্রিটে গিয়ে মৈত্রেয়বাবুকে নিয়ে বি ‌ই-২২০ বাড়িতে আসে। সেখান থেকে রাতেই কৃষ্ণাদেবীর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

যদিও কীভাবে কৃষ্ণাদেবীর মৃত্যু হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিস জানিয়েছে, দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এদিকে মায়ের মৃত্যু সম্পর্কে মৈত্রেয়র দাবি, মা অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। চলাফেরা করতে পারতেন না। তাঁদের বাড়িতে কোনও খাট ছিল না। মাকে শোয়ানোর জন্য একটি আলমারিকে মাটিতে শুইয়ে দেন মৈত্রেয়বাবু। তারপর তাঁর পিছনের দিকে মাকে শোয়ানো হয়েছিল। সেখান থেকেই তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৈত্রেয় আরও দাবি করেন, মাকে যখন সরাচ্ছিলেন, তখন তাঁর পা ভেঙে যায়। এরপরেই মৃত্যু হয়েছিল মায়ের। প্রথমে ঘরেই পুঁতে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু, পরে বাড়ির বাগানে মাকে পুঁতবে বলে ঠিক করেছিল। সেই মতো পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়েই গোটা ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়। পুলিস জানিয়েছে, মৈত্রেয়র কথায় প্রচুর অসংলগ্নতা রয়েছে। তাঁর মানসিক সমস্যা থাকতে পারে বলেই পুলিসের দাবি। তাই তাঁর মেডিক্যাল চেকআপ করানো হবে। তারপরে এই মামলায় পদক্ষেপ করা হবে। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।

এদিকে, প্রতিবেশীদের দাবি ভট্টাচার্য পরিবারের কেউই কোনওদিন পাড়ায় খুব বেশি মিশতেন না। মৈত্রেয়র বাবা গোরাচাঁদ ভট্টাচার্য সরকারি হাসপাতালের বড় চিকিৎসক ছিলেন। মা কৃষ্ণাদেবী সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। পেনশনের টাকা দিয়েই সংসার চলত। মৈত্রেয় কিছু করত না। বাড়ি এমনিতেই নোংরা থাকত, সব সময় গন্ধ বার হত। তাই প্রতিবেশীরা কেউ কিছু খেয়াল করেনি। তবে মাস দুয়েক আগে প্রতিবেশী এক মহিলার শ্লীলতাহানি করার অভিযোগে মৈত্রেয় একবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। সেই সময় কৃষ্ণাদেবীকে খাওয়াতেন প্রতিবেশীরাই। এক প্রতিবেশীর দাবি, কৃষ্ণাদেবী তাঁকে জানিয়েছিলেন, ছেলে প্রচুর টাকা চাইত। না দিতে পারলে তাঁকে মারধরও করতেন।