নির্যাতিত বধূ যা বললেন, তা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যাবেন আপনিও...


পুলিস সদর দপ্তরে এসে জেলা পুলিস সুপারের কাছে আক্রমণের বর্ণনা দিলেন খয়েরপুরে নির্যাতিত তরুণী বধূ পূর্ণিমা দাস এবং তার ১০ বছরের কন্যা। তাঁদের শরীরের আঘাত এবং আক্রমণের বর্ণনা শুনে রীতিমতো বাকরুদ্ধ খোদ পশ্চিম জেলার পুলিস সুপার রাজীব প্রতাপ সিং। তিনি বোধজংনগর থানার ওসি এবং এসডিপিও–কে নির্দেশ দিলেন অভিযুক্তদের রাতের মধ্যে গ্রেপ্তার করার জন্য। ঘটনা মঙ্গলবার সাড়ে দশটার পর। খয়েরপুরের পশ্চিম নোয়াবাদীর লস্করপাড়ায় পিন্টু দাসের বাড়ির সামনে দুটি মারুতি করে কুড়ি–পঁচিশজন দুষ্কৃতী নামে। গেট, দরজা ভেঙে ঢুকে যায় ব্যবসায়ী পিন্টু দাসের বাড়িতে। মারাত্মকভাবে জখম করে পিন্টু দাসের বৃদ্ধ মা লক্ষ্মীরানি দাসকে। বৃদ্ধ বাবাও আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরই দুষ্কৃতীরা পিন্টু দাসের স্ত্রী পূর্ণিমা দাস এবং ১০ বছরের কন্যার ওপর হামলে পড়ে বলে অভিযোগ। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ওই শিশুটিও রেহাই পায়নি। তার কান ছিঁড়ে সোনার গয়না নিয়ে গেছে দুষ্কৃতীরা। পূর্ণিমার হাতের শাঁখা পর্যন্ত খুলে নিয়েছে সমাজদ্রোহীরা। রীতিমতো একঘণ্টা ধরে চলে অত্যাচার। প্রতিবেশী যাঁরা চিৎকার শুনে এসেছিলেন তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। নগদ টাকা, সোনার গয়না–‌সহ যাবতীয় মূল্যবান আসবাবপত্র লুঠ করে নেওয়া হয়েছে। মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন পূর্ণিমার শাশুড়ি লক্ষ্মীরানি দাস। তিনি এখন আগরতলার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ–‌তে ভর্তি। পূর্ণিমার শরীরের এমন কোনও জায়গা বাকি নেই যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। অভিযোগ দুষ্কৃতীরা যাওয়ার সময় পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দেয় পুলিসে জানালে খুন করা হবে। বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ শিশুকন্যাকে নিয়ে পূর্ণিমা চলে আসেন পুলিস সদর দপ্তরে। এসপি রাজীব প্রতাপ সিংকে মা এবং মেয়ে দেখান কীভাবে তাঁদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। এই ঘটনার বীভৎসতার কথা শুনে এসপি নিজেও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ফোনে অপরাধীদের যে কোনও মূল্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এই ঘটনার খবর পেয়ে এসপি অফিসে গেছেন নারী সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা সাংসদ ঝর্না দাস বৈদ্য এবং স্বপ্না দত্ত। এসপি–‌র সঙ্গে কথা বলেছেন খয়েরপুরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএম পশ্চিম জেলা সম্পাদক পবিত্র কর। তাঁদের এসপি–‌র তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে রাতের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে। কাউকে ছাড়া হবে না। নারী সমিতির পক্ষ থেকে আক্রান্ত এই পরিবারটির নিরাপত্তা এবং যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি তাঁদের চিকিৎসা খরচ সরকারিভাবে বহন করার দাবি জানানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে ঝর্না বলেন, ডাকাতি, লুঠ করে ক্ষান্ত থাকেনি দুষ্কৃতীরা। অল্প বয়সের এই বধূ এবং তার কন্যাকে পর্যন্ত রেহাই দেয়নি। বর্বরতার সব সীমানা ছাড়িয়ে গেছে এই ঘটনা। এর নিন্দা জানিয়েছে সারা ভারত নারী সমিতির ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি। সিপিএম পশ্চিম জেলা কমিটির পক্ষ থেকেও নিন্দা জানানো হয়েছে।