মোদিকে হত্যার ছক কষেছিল লস্কর জঙ্গি নইম


বনগাঁ: মূল ষড়যন্ত্র ছিল জম্মু-কাশ্মীরের সেনা ছাউনির উপর হামলা এবং ভারতে জঙ্গিঘাঁটি তৈরি করা। এই গুরুতর অভিযোগে দুই পাকিস্তানি জঙ্গির সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েও 'লস্কর-ই-তোইবা'র জঙ্গি নেতা শেখ আবদুল নইম ওরফে সমীর ২০১৪ সালে ফিল্মি কায়দায় ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। তিন বছর পর লখনউ থেকে এনআইএ তাকে গ্রেপ্তার করায় জম্মু-কাশ্মীরে সেনা ছাউনির উপর হামলার ছকের পুরনো মামলায় ওই জঙ্গি নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে বনগাঁ মহকুমা আদালত। আগামীকাল সাজা ঘোষণা। সরকারপক্ষের আইনজীবী সমীর দাস জানিয়েছেন, গত তিন বছর সে নিরুদ্দেশ থাকার সময় দিল্লিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপরেও হামলার ছক কষেছিল। এনআইএ'র স্পেশাল কোর্ট দিল্লির পাটিয়ালা হাউসে ওই মামলা চলছে।

২০০৭ সালের ৪ এপ্রিল শেখ আবদুল নইম ওরফে সমীর, মুজাফ্ফর আহমেদ রাঠের, আবদুল্লা এবং মহম্মদ ইউনুস নামে লস্কর-ই-তোইবার চার জঙ্গিকে পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিল। সরকারি আইনজীবী সমীরবাবু বলেন, তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন ভারতে হামলার জন্য এই চারজন পাকিস্তানে লস্কর-ই-তোইবার শীর্ষনেতাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। এদের মূল নেতা এই নইম। মুজাফ্ফরের বাড়ি জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগে। আবদুল্লা ও ইউনুসের বাড়ি যথাক্রমে পাকিস্তানের করাচি ও হরিপুরে। নইমের বাড়ি মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে। সে নিজে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তারা চার ভাই। দুই দাদা ডাক্তার এবং একজন আয়কর দপ্তরের আইনজীবী।

বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণার দিন ঠিক করেছিল আদালত। সেই মতো কড়া নিরাপত্তায় জঙ্গি নেতা নইমকে এদিন বনগাঁ মহকুমা আদালতে নিয়ে আসা হয়েছিল। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে কমান্ডো বাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছিল আদালত চত্বর। ফাস্ট ট্র্যাক-১ কোর্টের বিচারক বিনয়কুমার পাঠক নইমকে বলেন, আপনি কী শাস্তি চাইছেন? নইম ইংরেজিতে বলে, আমি নির্দোষ। বিচারক বলেন, নির্দোষ বলার জায়গাই নেই। কারণ, আপনি ইতিমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আপনি সাজার কথা বলুন। তখন নইম বলে, আপনারা তো ফাঁসি দেবেন বলে ঠিক করেই রেখেছেন। তাই আমি মামলাটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য হাইকোর্টে জানিয়েছিলাম।
সরকারপক্ষের আইনজীবী সমীরবাবু বিচারককে বলেন, নইম লস্কর-ই-তোইবার জঙ্গি নেতা। মূল অভিযুক্ত। ভারতবর্ষকে ধ্বংস করার ছক কষেছিল। তাই আমরা চাই, একে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিই দেওয়া হোক। বিচারক বলেন, শনিবার সাজা ঘোষণা হবে।

সমীরবাবু বলেন, এই নইম বনগাঁর মামলাটি ছাড়াও দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীকে হামলার ছক, হায়দরাবাদে দু'টি বিস্ফোরণ এবং ২০০৬ সালে মুম্বই বিস্ফোরণে জড়িত। প্রধানমন্ত্রীর উপর হামলার ছক সহ এই বাকি চারটি মামলার কথাও আমরা আদালতকে জানিয়েছি। সমস্ত তথ্য ও প্রমাণ খতিয়ে দেখে ১২১ ধারায় ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি বনগাঁ মহকুমা আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক-১ কোর্টের বিচারক বিনয়কুমার পাঠক আবদুল্লা, ইউনুস ও মুজাফ্ফরের ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন। ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর লখনউ থেকে এনআইএ নইমকে গ্রেপ্তার করায় ওই মামলায় তার বনগাঁ কোর্টে ট্রায়াল হয়। গত মঙ্গলবার ১২১ ধারা সহ ১৫টি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ১২১ ধারায় সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন এবং সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি।