ফের মেয়ে! মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে আছড়ে মারল বাবা


প্রথমবার কন্যা সন্তান হওয়ার পরেই মুখ ভার হয়েছিল পরিবারের। দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হওয়ায় মুখোশ খুলে গিয়েছিল বাবার। মায়ের কোল থেকে মেয়েকে ছিনিয়ে নিয়ে আছড়ে মারল 'পিতৃদেব'। শুক্রবার সালারের সরমস্তিপুরের ওই ঘটনার পরে আব্বাস আলি নামে ওই কন্যা-হন্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ তার খোঁজে আশপাশের গ্রামে তল্লাশি শুরু করেছে। ফারহা নামে ওই মাস কয়েকের শিশুর মা আমিনা বিবি বলছেন, ''এমন বাবার মৃত্যুদণ্ড চাই!''

শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরে ওই নারকীয় ঘটনার পরে, পড়শিরাই মেয়েটিকে নিয়ে গ্রামীণ হাসপাতালে ছুটেছিলেন। সেখান থেকে রাতেই তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, শনিবার সেখানেই মারা যায় ফারহা। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কেতুগ্রামের আমিনার সঙ্গে আব্বাসের বিয়ে হয়েছিল বছর  দেড়েক আগে। বিয়ের পরেই তাদের প্রথম সন্তান ছিল মেয়ে। মাস ছ'য়েক আগে আরও একটি কন্যা সন্তান হয় ওই দম্পতির। আমিনার উপরে অত্যাচার শুরু হয় এর পরেই। শুধু আব্বাস নয়, সেই অত্যাচারের তালিকায় ছিল শ্বশুর বাড়ির সকলেরই নাম। 

দিন কয়েক ধরেই ফারহার জ্বর। ডাক্তার দেখানোর জন্য আব্বাসের কাছে টাকা চাইতেই ফের এক দফা মারধর করা হয়েছিল আমিনাকে। শুক্রবার ওষুধ কেনার জন্য ফের টাকা চেয়েছিলেন আমিনা।  আর তাতেই অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে করতে মায়ের কোল থেকে মেয়েকে ছিনিয়ে নেয় আব্বাস। তার পর, 'এই নে ওষুধ কেনার টাকা' বলেই ছোট্ট মেয়েটিকে আছড়ে ফেলে উঠোনে। তার পর বাড়ি থেকে সরে পড়ে সে। 

মায়ের কান্না শুনে পড়শিরা ছুটে এসে প্রায় নিথর মেয়েটিকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন। গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। তবে চিকিৎসকদের কিছু করার ছিল না। ধীরে ধীরে মারা যায় সে। আমিনা বলেন, "প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ার পরেও আমাকে নানান ধরণের কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার পর সেটা অত্যাচারে পরিণত হয়। তবে কোনও দিনই ভাবিনি যে মেয়েটাকে এ ভাবে মেরে ফেলবে। আমি ওদের ফাঁসি চাই।" ঘটনার পর আমিনা, আব্বাস-সহ শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। 
কান্দির মহকুমাশাসক অভীককুমার দাস বলেন, "খুবই হিংস্র ঘটনা। ছেলে-মেয়ে উভয়েই আমাদের চোখে সমান, জন্মের আগে থেকেই সরকারি হাসপাতালে সে ব্যাপারে সচেতন করা হয়। নিরন্তর প্রচার চলছে। তারপরেও এই অবস্থা!''