জঙ্গি অভিযানে রক্তাক্ত কাশ্মীর, সেনার গুলিতে ৬ স্থানীয়র মৃত্যুতে উত্তাল উপত্যকা

এখনও অব্যাহত তল্লাশি অভিযান।

জঙ্গি অভিযানকে কেন্দ্র করে ফের রক্তাক্ত হল কাশ্মীর। সেনা অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হল। জঙ্গিদের পাল্টা হানায় মৃত্যু হল এক জওয়ানের। পরে একটি গোপন ডেরায় আশ্রয় নেওয়া সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করেন সেনা জওয়ানদের দিকে। তাতে জওয়ানরা গুলি চালালে ৬ জন স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যু হয়। আহত হন ২০ জনেরও বেশি।

শনিবার সকালে এই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামার খারপোরা সিরনু এলাকায়। গোটা এলাকা থমথম করছে। পরিস্থিতি যাতে আরও বেহাল না হয়ে পড়ে, তার জন্য প্রশাসনের তরফে সেখানকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।

পুলওয়ামার খারপোরা সিরনু এলাকায় জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে বলে শনিবার সকালে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পায় নিরাপত্তা বাহিনী। সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় ছোটেন জওয়ানরা। এলাকায় জওয়ানদের দেখে আচমকা গুলি ছুড়তে শুরু করে জঙ্গিরা। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। তাতে তিন জঙ্গি নিহত হয়। সংঘর্ষে এক জওয়ানেরও মৃত্যু হয়। আহত হন আরও দু'জন।

নিহত জঙ্গিদের মধ্যে ছিল জহুর আহমেদ ঠোকরও। এক সময় সেনার ১৭৩তম টেরিটোরিয়াল বাহিনীর সদস্য ছিল ঠোকর। তবে এ বছরের শুরুতে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায় ঠোকর। গত জুলাইয়ে জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনে ঠোকর যোগ দিয়েছে বলে খবর পান সেনা গোয়েন্দারা।

জওয়ানদের গুলিতে তিন জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই নিরাপত্তা বাহিনীর উপর চড়াও হন স্থানীয় বাসিন্দারা। জওয়ানদের লক্ষ্য করে তাঁরা পাথর ছুড়তে শুরু করেন।

বিক্ষোভকারীদের হঠাতে প্রথমে ছর্‌রা বন্দুক ব্যবহার করা হয়। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসও। তাতেও কাজ না হওয়ায় গুলি ছুড়তে বাধ্য হন জওয়ানরা। তাতেই ৬ জন স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান আমির আহমেদ পাল এবং আবিদ হুসেন নামের দুই যুবক। কিছু দিন আগে ইন্দোনেশিয়া থেকে এমবিএ পাশ করে ফিরেছিলেন তাঁরা। পরে মৃত্যু হয় পরিগামের বাসিন্দা লিয়াকৎ দর, বাল্লোর বাসিন্দা সুহেল আহমেদ এবং মোঙ্ঘামার বাসিন্দা শাহবাজের। গুরুতর জখম অবস্থায় পুলওয়ামা জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় আরও এক জনের। এখনও পর্যন্ত তাঁকে শনাক্ত করা যায়নি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় আরও বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলওয়ামার ডেপুটি কমিশনার গোলাম মহম্মদ দর। এলাকায় আর কোনও জঙ্গি লুকিয়ে রয়েছে কি না, তা দেখতে তল্লাশি অভিযান চলছে বলে তিনি  জানিয়েছেন।

প্রশাসনিক অব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে সম্প্রতি ফের উপত্যকায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। এই নিয়ে চলতি সপ্তাহে তৃতীয় বার তার প্রমাণ মিলল। দু'দিন আগেই উত্তর কাশ্মীরের সোপোরে দুই জঙ্গি নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে। তার আগে মঙ্গলবার দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ানে পুলিশ চৌকিতে হামলা চালায় একদল জঙ্গি। চার পুলিশকর্মীকে খুন করে তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র লুঠ করে চম্পট দেয় তারা।