কওসর কলকাতায়, সালাউদ্দিনকে হাতে পেতে চায় STF


কলকাতা : এই মুহূর্তে জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার চিফ কওসর রয়েছে কলকাতায়। ট্রানজিট রিমান্ডে তাকে নিজেদের হেপাজতে নিয়েছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF)। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ধৃতের কাছ থেকে শুধু বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ সংক্রান্ত নয়, পাওয়া গেছে জঙ্গি তৎপরতার আরও তথ্য। সূত্র জানাচ্ছে, JMI ৬টি মডিউল তৈরি করে ফেলেছে এরাজ্যে। এমনকী গোয়েন্দারা নিশ্চিত, বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে মাস্টারমাইন্ড ছিল কওসর। পাশাপাশি গোয়েন্দারা মনে করছেন, জামাত-উল- মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার চিফ সালাউদ্দিনের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে কওসরের মাধ্যমেই।

অগাস্ট মাসে কর্নাটকের রামাগাড়া থেকে ধরা পড়ে মনিরুল। NIA জানতে পারে সে আর কেউ নয় জাইদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান। সে ভারতে কাজ করছিল জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়া(JMI)-এর প্রধান হিসেবে। যদিও ভারতে তার ছদ্মনাম কওসর। জামাত-উল- মুজাহিদিন প্রধান সালাউদ্দিন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ মিজানকে দায়িত্ব দিয়েছিল সংগঠনের ভারতীয় শাখার। কর্নাটকের কোলারের একটি টেকনোলজি ইন্সটিটিউটে চাকরি নিয়ে গোপনে চালিয়ে যাচ্ছিল, সংগঠনের মডিউল তৈরির কাজ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। NIA-এর হাতে ধরা পড়ে সে। তার গ্রেপ্তারির খবর পেয়েই তৎপর হয় কলকাতা পুলিশের STF। কলকাতার গোয়েন্দারাও তাকে হাতে পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। আসলে বাংলাদেশ সীমান্তে থাকা এই পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের বেশ কয়েকটি খটকার জবাব দিতে পারে কওসর, এমনটাই ছিল গোয়েন্দাদের ধারণা। মনে করা হচ্ছিল, জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার যাবতীয় তথ‍ও দিতে পারে সেই।

জুলাইয়ে NIA কেরালার মালাপ্পুরমের একটি বাঙালি শ্রমিক কলোনি থেকে গ্রেপ্তার করে দু'জনকে। বুদ্ধগয়া বোমা বিস্ফোরণ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতরা হল আবদুল করিম (১৯) ওরফে ছোট্টা এবং মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে তুহিন। ছোট্টার বাড়ি মুর্শিদাবাদের ইলিজাবাদে। আর বীরভূমের বাসিন্দা তুহিন JMI-এর অন‍্যতম মাথা। বিস্ফোরক বানাতেও ওস্তাদ। খোদ মিজান তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে খবর। এবং সে তুহিনের উপর নির্ভরও করত অনেকটাই। আর একমাত্র তুহিনই জানত মিজানের অবস্থান। তাকে জেরা করেই বোমারু মিজানের খোঁজ পায় NIA। তারপরই বেঙ্গালুরু থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের রামাগাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মিজানকে। জানা যায়, চলতি বছরেই সে রামাগাড়ায় আসে। তারপর আমির খান নামে জনৈক বাসিন্দার বাড়িতে ভাড়ায় থাকত। গ্রেপ্তারির সময় তার কাছে পাওয়া যায় বোমা বানানোর সার্কিট, বিস্ফোরক ও ল্যাপটপ। 

তবে শুধু বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ মামলা নয়। মিজান খাগরাগড় বিস্ফোরণের ঘটনাতেও মূল অভিযুক্ত। একটা সময় তার মাথার দাম ১০ লাখ টাকা ধার্য করে পোস্টারও দেয় NIA। কিন্তু, কিছুতেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সূত্র জানাচ্ছে, এর মাঝে বসে থাকেনি মিজান। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও মালদাসহ একাধিক জায়গায় তৈরি করেছে জামাত-উল- মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার মডিউল। 

২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ত্রিশাল ও ভালুকার মাঝামাঝি সাইনবোর্ড এলাকায় ফিল্মি স্টাইলে দিনদুপুরে পুলিশের প্রিজনভ্যানে হামলা চালায় JMB-র সদস্যরা। গুলি ও বোমা ফাটিয়ে সাজাপ্রাপ্ত JMB শীর্ষনেতা সালাউদ্দিন ওরফে সালোহিন, জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান এবং রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদকে ছিনিয়ে নেয় তারা। ওইদিন একটি মামলায় হাজির করার জন্য তাদের ময়মনসিংহের আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সূত্র জানাচ্ছে, এরপরই তারা লুকিয়ে ভারতে চলে আসে। আর সেই বছরেই ১০ অক্টোবর খাগড়াগড়ে হয় বিস্ফোরণ। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ধরা যায়নি মিজানকে। কিন্তু, কর্নাটক থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২৭ নভেম্বর ট্রানজিট রিমান্ডে মিজান ওরফে কওসরকে হাতে পায় STF। এরপর আদালতে তোলা হলে তাকে ১৪ দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। তাকে হাতে পাওয়ার পর গোয়েন্দারা মনে করছেন জামাতের জাল অচিরেই কাটতে সক্ষম হবেন তাঁরা। এর জন্য বুদ্ধগয়া, খাগরাগড় ছাড়া আরও কয়েকটি মামলায় জড়িত থাকা মিজানকে ভালোমত জেরা করতে চায় STF।