জয়নগর শুটআউট: দিল্লিতে গ্রেফতার তৃণমূল নেতা খুনে মূল অভিযুক্ত বাবুয়া

মূল অভিযুক্ত আবদুল মোল্লা ওরফে বাবুয়া


জয়নগর শুটআউট কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত আবদুল মোল্লা ওরফে বাবুয়াকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করল সিআইডি। ধৃত বাবুয়াকে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসার জন্য আজই আবেদন জানাবে সিআইডি। সম্ভবত আজ বা আগামিকাল ধৃত বাবুয়াকে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে। একইসঙ্গে এই শুটআউটের ঘটনায় দিল্লি থেকে আবদুল মিস্ত্রি, মনিরুদ্দিন গাজি নামে আরও ২ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এরফলে শুটআউটের ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১৯।

১২ ডিসেম্বর রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে ইন্ডিয়ান অয়েলের পেট্রোল পাম্পে সরফুদ্দিনের গাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। ওই গাড়িতে ছিলেন বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসও। প্রথমে মনে করা হয়েছিল দুষ্কৃতীদের টার্গেট ছিল বিধায়ক বিশ্বনাথ। কিন্তু পরে দেখা যায়, দুষ্কৃতীদের টার্গেট বিধায়ক ছিলেন না। সেদিন একটা কাজে গাড়ি থেকে কিছু আগেই নেমে গিয়েছিলেন বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস। আর তারপরই হামলা চালানো হয়। গাড়ি লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছোঁড়া হয় বোমাও। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সরফুদ্দিন সহ আরও ২ জনের।

তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পারে, জয়নগর শুটআউটের ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়েছিল মাসখানেক ধরে। ধৃতদের জেরা করে এমন তথ্যই উঠে আসে। ধৃত সাজমল জেরায় জানায়, বাবুয়া আর সে সরফুদ্দিনের শত্রুর শত্রুদের জড়ো করার চেষ্টা করছিল। সেই অনুযায়ী বেশ কয়েকটি দল সেদিন একত্রিত হয় সরফুদ্দিনের বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত, বিধায়ক ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সরফুদ্দিনের ক্ষমতা বাড়ছিল। আর তার ফলে প্রভাব কমছিল বাবুয়ার। পুরনো শত্রুতার জেরেই খুন,  প্রাথমিক তদন্তের পর সেটা নিশ্চিত হয়ে যায় পুলিস।

জয়নগর খুন কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত বাবুয়ার বেড়ে ওঠা একদিনে নয়। ধীরে ধীরে নিজের সাম্রাজ্য বাড়িয়েছে বাবুয়া। জয়নগর,বহড়ু, মথুরাপুর পর্যন্ত নেটওয়ার্ক ছিল বাবুয়ার। তোলাবাজি, প্রোমোটিং, বেদখলি জমি বিক্রি , ভোটের সময় নেতাদের অ্যাকশন স্কোয়াডের পান্ডা, সব দিকেই বাবুয়ার ছিল অবাধ যাতায়াত। এখন রয়েছে মাছ রফতানির ব্যবসা, মোটর সাইকেলের শোরুম। একসময় এলাকার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত ছিল বাবুয়া। কিন্তু সরফুদ্দিনের বাড়বাড়ন্ত, বিধায়কের আস্থাভাজন হয়ে ওঠায় বিশ্বনাথ দাসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় বাবুয়ার।

এরপরই বাবুয়া দল বদলে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা জগু সরকারের। তারপর থেকেই বিশ্বনাথ ঘনিষ্ঠ সরফুদ্দিনের সঙ্গে বেশকয়েকবার ঝামেলা হয় বাবুয়ার। এলাকায় ক্ষমতা দখল নিয়ে সরফুদ্দিনের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলা লাগত বাবুয়ার। সরফুদ্দিনের উপর বোমাবাজি, হামলাতে আগেও নাম জড়িয়েছিল বাবুয়ার। পুলিস সূত্রে খবর, সেই থেকেই সরফুদ্দিনকে খুনের ছক কষে বাবুয়া। সরফুদ্দিনকে সরিয়ে দিতে পারলে এলাকা দখল সুবিধাজনক হবে এই ভাবনা থেকেই খুনের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে বাবুয়া। শুটআউটের ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল বাবুয়া।