খাগড়াগড় কাণ্ডে ধৃত জঙ্গিদের ডেরায় অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম, নাশকতার ছক


খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডে পলাতক আরও দুই অভিযুক্তকে পাকড়াও করল এনআইএ। হুগলির আরামবাগে মিস্ত্রির পরিচয় দিয়ে গা ঢাকা দিয়ে ছিল তারা। সেখান থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, ধৃত শীর্ষ জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র নেতা কওসরকে জেরা করেই তার এই দুই সঙ্গীর খোঁজ মেলে। ধৃতদের নাম কদর কাজি ও হাবিবুর ওরফে সাজ্জাদ। কদর সম্পর্কে কওসরের শ্যালক। কীর্ণাহারে আসার পরই কওসরের সঙ্গে বিয়ে হয় কদরের বোনের। সোমবার গভীর রাতে এনআইএ-র দু'টি টিম আলাদাভাবে হানা দেয় আরামবাগের ডোঙ্গলে। দক্ষিণ ভারত থেকে ফিরে এসে সেখানেই বেশ কিছুদিন ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিল এই দু'জন। প্রায় তিন মাস ধরে এই এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে ছিল তারা বলে প্রাথমিক জেরায় জানা গিয়েছে। তাদের কাছে মিলেছে বেশ কিছু তেজস্ক্রিয় ব্যাটারি ও তার। মঙ্গলবার এনআইএর বিশেষ আদালতে তোলা হয় এই দু'জনকে।

বীরভূমের কীর্ণাহারের বাসিন্দা কদর গাজি প্রথম থেকেই কওসরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। জেএমবির খাগড়াগড় মডিউলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল সে। ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর থেকেই পলাতক হয়ে যায় কদর। জানা যায়, রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়েই দক্ষিণ ভারতে গা ঢাকা দেয় কদর ও তার আরেক সঙ্গী হাবিবুর। সেও খাগড়াগড় মডিউলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল। সংগঠনের তহবিল সংগ্রহ থেকে শুরু করে জঙ্গি প্রশিক্ষণের একটা বড় দিক সামলাতে হাবিবুর। খাগড়াগড়ে ঘাঁটি গেড়ে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদিয়া মিলিয়ে এক বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে এ দেশে পাড়ি জমিয়েছিল কওসর, ইউসুফ, কদররা। ২০১৪ সালে বোমা বাঁধতে গিয়ে আচমকা বিস্ফোরণে গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসে। দু'জনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় এই জঙ্গিরা। কওসর বাংলাদেশে বোমারু মিজান নামে খ্যাত ছিল। সেখান থেকে এ রাজ্যে এসে ঘাঁটি গাড়ে খাগড়াগড়ে। সেখানে জেএমবির মডিউলের কাজ শুরু করে। সেই সময় থেকেই কওসরের সঙ্গে নদিয়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদে জেএমবির নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ করত কদর। তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছিল ঝাড়খণ্ড পার করেও। অন্যদিকে, জঙ্গি প্রশিক্ষণ ও তহবিলের সংগ্রহের কাজ করত হাবিবুর। তাদের প্রধান স্লোগানই ছিল 'আমরা হব তালিবান, ভারত হবে আফগানিস্তান'। এই স্লোগান দিয়েই গোপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কলকাতার শেক্সপিয়ার সরণির এক কেমিক্যাল কারখানার কর্মী কাজল। সেই বিস্ফোরণের জন্য প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল সরবরাহ করত কওসরদের। শেষে বিস্ফোরণের পর জেএমবির মডিউলের ঘটনা সামনে আসতেই সতর্ক হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর অষ্টমীর দিন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তার পর থেকেই এনআইএ তৎপর হয়। তদন্ত শুরু করে একে একে ধরা পড়তে থাকে জঙ্গিরা। গোপন ডেরা থেকে একে একে তাদের ধরপাকড় শুরু হয়। বছর দুয়েক আগে মহম্মদ ইউসুফ ধরা পড়ে কলকাতা পুলিশের হাতে। এক বছরের মধ্যে কওসর ধরা পড়ে এনআইএর জালে। কওসরই শেষে জেরায় তার বাকি দুই সঙ্গীর নাম বলে দেয়। আরামবাগে গা ঢাকা দেওয়ার সময়েই ধরা পড়ে কদর ও হাবিবুররা।