রাজ্যে ৫২ বছর বাদে তৃতীয়বার টানা দু’দিনের ধর্মঘট


কলকাতা: রাজ্যে ধর্মঘট একশোরও বেশি হয়েছে। কিন্তু টানা দু'দিনের ধর্মঘটের নজির রাজ্যে অতীতে মাত্র দু'টি আছে। শেষ দু'দিনের ধর্মঘটটি হয়েছিল প্রায় ৫২ বছর আগে ১৯৬৬ সালে। আগামী ৮ ও ৯ জানুয়ারি শ্রমিক সংগঠনগুলি সারা দেশে দু'দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তা হলে তৃতীয়বার টানা দু'দিনের ধর্মঘট হবে।

২০১৩ সালের ২০-২১ ফেব্রুয়ারি গোটা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও দু'দিনের টানা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল শ্রমিক সংগঠনগুলি। একেবারে শেষ সময়ে দ্বিতীয় দিনের ধর্মঘট শুধু পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনটি ২১ ফেব্রুয়ারি হওয়ায় ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান পালনের কারণ দেখিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। খাদ্য আন্দোলনের সমর্থনে বামপন্থী দলগুলি ১৯৬৬ সালের ২২-২৩ সেপ্টেম্বর ধর্মঘট ডেকেছিল। এর আগেও একবার রাজ্যে টানা দু'দিনের ধর্মঘট হয়েছিল ১৯৫৩ সালের ২৩ ও ২৪ জুন। জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাশ্মীরে রহস্যজনক মৃত্যুর প্রতিবাদে জনসঙ্ঘ এই ধর্মঘট ডেকেছিল। আগামী ৮ ও ৯ জানুয়ারি শ্রমিক সংগঠনগুলি গোটা দেশে টানা দু'দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

সরকারি নির্দেশিকা খতিয়ে দেখে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী স্বাধীনতার পর থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ১১৬ বার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। এই হিসেবের মধ্যে অবশ্য শুধু রাজ্যের পাশাপাশি দেশব্যাপী ডাকা ধর্মঘটগুলিও আছে। দু'টি ধর্মঘট দু'দিনের হওয়ার কারণে ধর্মঘটের মোট দিনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৮।

এখনও পর্যন্ত ধর্মঘট ডাকার নিরিখে অনেক এগিয়ে আছে বামপন্থীরা। বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন ও বামফ্রন্টের শরিক রাজনৈতিক দলগুলির ডাকে ধর্মঘট হয়েছে ৭৩টি। বামপন্থী এসইউসিআই ১০টি ও সিপিআইএমএল একটি ধর্মঘট ডেকেছে রাজ্যে। কংগ্রেস ১৪টি, তৃণমূল কংগ্রেস ১৩টি, বিজেপি-র ডাকা পাঁচটি ধর্মঘট এই তালিকায় আছে। বিজেপি-র পূর্বসূরি জনসঙ্ঘ চারটি ধর্মঘট ডেকেছিল রাজ্যে। স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ধর্মঘটটি ১৯৫০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ডেকেছিল হিন্দু মহাসভা। ইস্যু ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘু মানুষদের উপর নির্যাতন। 
ধর্মঘট সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকাগুলি ঘেঁটে রাজ্যে হওয়া অতীতের ধর্মঘটগুলিকে চিহ্নিত করেছেন সরকারি কর্মী সংগঠনের নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কোন দশকে কারা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল, তার বিস্তারিত হিসেবও তিনি তৈরি করেছেন। এতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৮০-র দশকে রাজ্যে যখন বামফ্রন্ট সরকার আসীন, তখনও বামপন্থীদের ডাকা ধর্মঘটের সংখ্যা অনেক বেশি। মোট ১২টি ধর্মঘটের মধ্যে ১১টি ছিল বামপন্থীদের। একটি মাত্র ছিল কংগ্রেসের। ১৯৯০-এর দশকে বামপন্থীরা সাতটি, কংগ্রেস ১০টি, বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস একটি করে ধর্মঘট ডেকেছিল। ২০০০ সালের প্রথম ১০ বছরে রাজ্যে বামপন্থীরা ক্ষমতায় ছিল। ওই সময় মোট ৩৪টি ধর্মঘটের মধ্যে ১০টি ছিল বামফ্রন্টের শরিক দল ও শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা। ওই সময়ের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ১২টি, এসইউসিআই ৯টি, বিজেপি ও কংগ্রেস একটি করে ধর্মঘটের ডাক দেয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের কোর কমিটির সদস্য পার্থবাবু জানিয়েছেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময় বামপন্থী সংগঠনগুলি ধর্মঘট ডাকলে সরকারি অফিস খুলে রেখে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালানোর একটা আনুষ্ঠানিক নির্দেশিকা জারি হতো। কিন্তু বাস্তবে অফিসের দরজা বন্ধ থাকার কারণে কর্মীরা ইচ্ছা থাকলেও ঢুকতে পারতেন না। ধর্মঘটের দিন না আসার জন্য ছুটি বা বেতন কোনওটাই কাটা হতো না। কর্মীদের অনুপস্থিতির তালিকাতেও ধর্মঘটের দিনটির উল্লেখই থাকত না। 
তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে ধর্মঘট ডাকা অনেক কমে গিয়েছে। ২০১১ ও ২০১৪ সালে কোনও ধর্মঘট ডাকা হয়নি। ২০১২ সালে শুধু তিনটি ধর্মঘট ডাকা হয়। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে ডাকা হয় দুটি করে ধর্মঘট। ২০১৫, ১৬ এবং ১৭ সালে একটি করে ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল।