মৎস্যসুখে বাধা, বিপদ বাড়াচ্ছে ডুয়ার্সের মাছে অতিরিক্ত ফরমালিন


মালবাজার: বাঙালির মাছ, ভাত ছাড়া অন্য স্বাদে সেই তৃপ্তি নেই। শীতের মরসুমে উত্তরবঙ্গের খরস্রোতা নদীগুলো থেকে পাওয়া মাছের চাহিদা এখন তুঙ্গে। ডুয়ার্স গেলেই হোটেলে নদিয়ালি মাছের স্বাদ পেতে চাইছেন পর্যটকরা। পুঁটি, চেপ্টি, বরোলি পাতে পড়ছেও দেদার। তবে এই মৎস্যভক্ষণ আদৌ কতটা নিরাপদ, তা নিয়েই উঠে যাচ্ছে প্রশ্ন। উত্তর খুঁজতে গিয়ে সামনে এল বিপজ্জনক সব তথ্য।

চাহিদাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি মুনাফার জন্য মাছ ধরতে ইদানিং রাসায়নিকের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে। অধিকাংশ মাছ ধরা হচ্ছে কারেন্ট, ব্যাটারি এবং ফরমালিন ব্যবহার করে। তারওপর নদীর জল প্রায় তলানিতে। জাল, বঁড়শি, কুমনি দিয়ে মাছ ধরা যাচ্ছে না। রাতের আঁধারে তোর্সা, রায়ডাকের জলে চুপিসাড়ে মিশছে ফরমালিন। সকালে ভেসে উঠছে সার সার মাছের নিথর দেহ। সেসব জালে টেনে চলে যাচ্ছে বাজারে। অজান্তে লাঞ্চ, ডিনারে মাছভাতের সঙ্গে বিষ ঢুকছে শরীরে। পালটে যাচ্ছে মিষ্টি জলের মাছের স্বাদও। বিপদসংকেত আরও আছে। এলাকার চা বাগানগুলির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝোরা। পাথর দিয়ে তার জল আটকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে রাসায়নিক। বিষের প্রভাবে যেমন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে মাছ, তেমনই সংকটের মুখে পড়ছে পাহাড়ি নদীগুলোর ভবিষ্যৎ। ঝোরার জল খেয়ে আক্রান্ত হচ্ছে বন্য পশুপাখিরা।

পাহাড়ি নদী, ঝোরার জলে রাসায়নিক প্রয়োগের বিরোধিতায় পরিবেশপ্রেমী মানবেন্দ্র দে সরকার, সুজিত দাসরা অনেকদিন ধরেই সোচ্চার। তাঁদের সতর্কবার্তা, এখনই সচেতন না হলে গোটা প্রাণীসমাজই মারাত্মক ক্ষতির মুথে পড়বে। টলে যাবে গোটা পাহাড়ি এলাকার বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য। পরিবেশবিদদের পরামর্শ, এভাবে মাছধরা রুখতে সরকারি তরফে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। আইন প্রয়োগে শাস্তির ব্যবস্থা করলে হয়তো এই প্রবণতা কমবে। তাতে বাড়তি দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে মৎস্য দপ্তরকে। তাহলেই বাঙালির মৎস্যসুখ থাকবে আগের মতোই – নিখাদ, চিরকালীন সুস্বাদু রূপে।