টাকার বিনিময়ে ‘সিভিক’ গোয়েন্দা


গোয়েন্দা বিভাগের নাম ব্যবহার করে টাকা নেওয়ার অভিযোগে কলকাতার একটি সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নজরে।

যাদবপুর থানা এলাকার সেলিমপুরে ওই সংস্থাটির দপ্তর। নাম ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (এনআইবি)। অভিযোগ, তারা সদস্যপদ দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে পাঁচ, দশ এবং পঁচিশ হাজার টাকা করে ডোনেশন হিসেবে আদায় করছে। তবে সরাসরি এই টাকা নেওয়া হচ্ছে না। এনআইবির নিজস্ব ওয়েবসাইটে ঢুকে নিজের নাম স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নথিভুক্ত করালে তবেই সেই টাকা পেমেন্ট করার গেটওয়ে চালু হয়ে যাচ্ছে। সংস্থার পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের অপরাধ এবং দুর্নীতিদমনের মতো কাজে তারা যুক্ত। তাদের কাজকর্ম সম্পর্কে সরকারি স্তরে জানানো রয়েছে।

শুক্রবার যোগাযোগ করা হলে সংস্থার মুখপাত্র রিয়া গুপ্তা জানান, 'আলোচনায় বসতে চেয়ে আমরা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রক থেকে সেই চিঠি সিবিআইয়ের ডিরেক্টরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতেই আমরা কাজ করছি।' তা সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠেছে, এ ভাবে কি কোনও বেসরকারি সংস্থা গোয়েন্দা সংস্থার নাম ব্যবহার করতে পারে? কারণ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে তো একটি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো রয়েছে। প্রতিটি রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগের অধীনেও ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ নামে আলাদা গোয়েন্দা বিভাগ রয়েছে।

সেখান থেকেই আরও প্রশ্ন, কী কাজ করে কলকাতার সংস্থাটি? শুক্রবার বিকেলে যাদবপুর থানা থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে সেলিমপুরে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোতে গিয়ে দেখা গেল, একটি পুরোনো বাড়ির দোতলার ঘর দপ্তর হিসেবে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বাইরে অবশ্য কোনও বোর্ড নেই। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর হাজির হলেন এক ব্যক্তি। জানালেন, বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনা তাঁদের জানালে তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখেন এবং পুলিশকে জানান। যদিও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাঁরা পরামর্শ দেন, তাঁদের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। তার পর কাজ দেওয়া হবে। তবে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জন্য কাজ করতে চাইলে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা সংস্থার অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে প্রথমে। স্বেচ্ছাসেবকদের সংস্থার প্যাড দেওয়া হবে, যেখানে অপরাধের বিবরণ লিখে থানায় অভিযোগ আকারে জমা দেওয়া যেতে পারে। ওই ব্যক্তির বক্তব্য, কিছু দিন আগে এএআই নামে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় তারা ঘটনা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানান।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, তাদের কাছে ইতিমধ্যেই এই সংস্থা বেশ কিছু সম্পর্কে অভিযোগ জমা পড়েছে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে তাঁদের তদন্তকারীরা দেখতে পেয়েছেন, এঁদের কর্মকর্তারা যে গাড়িতে চড়েন, সেখানে সংস্থার লোগো ব্যবহারের পাশাপাশি ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়ো সেট ব্যবহার করা হয়। এই সংক্রান্ত নথি এবং ছবিও তাঁদের কাছে পৌঁছেছে। কেন এ ধরনের রেডিয়ো সেট গাড়িতে লাগানো রয়েছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে।

শুক্রবার এনআইবি-র মুখপাত্র রিয়া গুপ্তা জানান, 'গত নভেম্বর মাসে দিল্লির করোলবাগে আমাদের সঙ্গে ইন্টেলিজেন্সের অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে তাঁরা আমাদের কাজ শুরু করতে বলেছেন। তা ছাড়া সরকারি ভাবে সংস্থার রেজিস্ট্রেশন করানো রয়েছে। একটি সংস্থা অপরাধ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতেই পারে। এতে সমস্যা কোথায়?' কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের পাল্টা বক্তব্য, 'এর পর তো ন্যাশনাল পুলিশ, ন্যাশনাল সিবিআই বলে যে কেউ কোনও সংস্থা খুলে দিতে পারে। এটা হয় নাকি? আমরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছি।'