ইতিহাস বলছে সপা-বিএসপি-র জোট বিজেপি-র কাছে আতঙ্কের, কেন, জানুন সেই কাহিনি


একেই বলে অদৃষ্ট। একদিন যে মায়াবতী হাত ধরে সপা-র সঙ্গে বিচ্ছেদের রেখা টেনেছিল বিএসপি, আজ সেই মায়াবতী পাশে বসালেন সপা-র প্রাক্তন সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদবের পুত্র অখিলেশকে। আর সেই সঙ্গে ঘোষণা করে দিলেন নতুন জোটের। লোকসভা নির্বাচনে যে জোট-কে নিয়ে বিজেপি রীতিমতো আতঙ্কে থাকবে বলেই অধিকাংশ জনমত সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে। 

২৫ বছর আগেও যখন বহুজন সমাজ পার্টি ও সমাজবাদী পার্টি একে অপরের হাত ধরেছিল তখন প্রবল বেগে দৌড়চ্ছিল বিজেপি-র জয়রথ। কিন্তু, ১৯৯৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র সেই বিজয়রথ আটকে গিয়েছিল বিএসপি-সপা জোটের কাছে। সে সময় বিএসপি-র সুপ্রিমো কাঁশিরাম। আর সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিং যাদব। 

১৯৯৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিএসপি ও সপা একে অপরের হাত ধরার আগে রয়েছে আরও কিছু ঘটনা। যেখান থেকেই আসলে সূত্রপাত হয়েছিল এই জোটের। ১৯৯১ সালে জাতীয় রাজনীতিতে তখন এক উথাল-পাতাল পরিস্থিতি। কেন্দ্রে শক্তিশালী সরকার না থাকায় জাতীয় রাজনীতিতে এক সঙ্কটকাল। এরমধ্য়ে জনতা দল ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। উত্তর প্রদেশে সমাজতন্ত্রের রাজনীতিকরা পড়েছেন অথই জলে। যার জেরে ১৯৯১ সালে বিজেপি প্রথম একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তর প্রদেশে সরকার তৈরি করে। যার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কল্য়াণ সিং।

এহেন পরিস্থিতিতে এটাওয়া লোকসভা কেন্দ্রে ১৯৯১ সালে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়। বিজেপি-র সঙ্গে যে কোনওভাবেই এঁটে উঠতে পারবেন তা বুঝেছিলেন সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিং যাদব। এই উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন বিএসপি-র কাঁশীরাম।

ভোটের দিন মুলায়ম কৌশলে সমাজবাদী পার্টির ভোট কাঁশীরামকে পাইয়ে দেন। উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে লোকসভায় প্রথমবার সাংসদ হওয়ার সুযোগ পান কাঁশীরাম এবং মুলায়মের কৌশলের কাছে হেরে যায় বিজেপি। কাঁশীরাম তখন মুলায়মের প্রতি কৃতজ্ঞ। মুলায়ম দলিতদের নিয়ে রাজনবীতি করলেও কিছুতেই লোকসভা নির্বাচনে জিততে পারছিলেন না। তাঁর সাংসদ হওয়ার ইচ্ছা অপূর্ণ-ই থেকে যাবে বলে মনে করছিলেন কাঁশীরাম। কিন্তু, মুলায়ম যেন কাঁশীরামের অপূর্ণ ইচ্ছা-কে পূরণ করার সুযোগ করে দিলেন। আসলে মুলায়মে সেই ভোটে ওবিসি-দলিত-মুসলিম কম্বিনেশনকে হাতিয়ার করেছিলেন।

এরপর ১৯৯৩ সালে উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে মুলায়মের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে হাত মেলায় কাঁশীরামের বিএসপি। আর মুলায়ম-কাঁশীরামের জোটের কাছে হার হয় বিজেপি-র। সবচেয়ে বড় কথা বাবড়ি মসজিদের মতো ইস্যু থাকার সত্ত্বেও সেই ভোটে কল্যাণ সিং-এর নেতৃত্বে বিজেপি-র হার হয়।

মুলায়াম ও কাঁশীরামের জোটে অবশ্য ২ বছরের মধ্যেই সমাধিস্থ লাভ করে। কারণ, কাঁশীরামের প্রধান শিষ্যা তথা বিএসপি-র সেকেন্ড ইন কমান্ড মায়াবতীর সঙ্গে মুলায়ম সিং-এর বিরোধ। মায়াবতী যে পথে বিএসপি-র রাজনৈতিক দর্শনকে চালিত করতে চাইছিলেন তারসঙ্গে সমাজবাদী পার্টির রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধ বাধছিল। ক্রমশই একে অপরের থেকে দূরে সরছিল বিএসপি ও সপা। এরপর ১৯৯৫ সালে বিএসপি জোট থেকে সরে দাঁড়ালে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে সপা-র কর্মী ও সমর্থকরা। লখনউ-এ এক গেস্ট হাউসে মায়াবতীর উপরে চড়াও হয় সমাজবাদী পার্টির কর্মী ও সমর্থকরা। ফলে মুলায়ম ও কাঁশীরামের মধ্যে আপোষের যেটুকু রাস্তা বাকি ছিল, সেটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। 

২৫ বছর আগের সেই জোটের পর এই ২০১৯-এ ফের জোট বাঁধল বিএসপি ও সপা। দুটো দলের দায়িত্ব এখন মুলায়ম ও কাঁশীরামদের উত্তরসূরীদের হাতে। যে মায়াবতী এককালে এই জোট ভাঙার পিছনে মূল কারণ ছিলেন তিনি শুক্রবার ফের সেই জোট-কে জুড়লেন। আর এবারও বিএসপি ও সপা-র জোটের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। ১৯৯১ সালে সংখ্যাগরিষ্ট পাওয়া বিজেপি-কে ১৯৯৩ সালে মাত দিয়েছিল এই জোট। এবারও সংখ্য়াগরিষ্ঠ যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে ধাক্কা দেওয়ার চ্যালেঞ্জ।

বিএসপি-র সঙ্গে জোট আদৌ কাজ করবে কি না তা পরীক্ষামূলকভাবে ১৯৯১ সালে এটাওয়া লোকসভার উপনির্বাচনে যাচাই করে নিয়েছিলেন মুলায়ম সিং যাদব। ২০১৯-এ বিজেপি-র বিরুদ্ধে বিএসপি-সপা জোট কতটা কার্যকরি তা পরীক্ষামূলকভাবে দেখে নিয়েছেন মায়াবতী ও অখিলেশ। গোরখপুর ও কৈরানা-র উপনির্বাচনে তাঁদের অলিখিত জোট এবং তার সাফল্য-ই বলে দিয়েছে বিএসপি-সপা জোট বিজেপিৃ-র বিরুদ্ধে কতটা কার্যকরী। এই সাফল্য়ের ভিত্তিতেই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সরকারিভাবে জোটবদ্ধ হয়েছেন মায়াবতী ও অখিলেশ। ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হবে না তো? তা জানতে অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক মাসের।