জাতীয় সড়কের কাজে ক্ষুব্ধ মমতা


রাজ্যের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান— এই দুই লক্ষ্যকে '‌পাখির চোখ'‌ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বাণিজ্যে লগ্নি টানতে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মানের শিল্পপতিদের নিয়ে সম্মেলন করেছেন কলকাতায়। নিজেও গেছেন বিদেশে। বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করে বাংলায় আনতে। এবার তারই রেশ ধরে বিশ্ব বিপণন বাণিজ্য সংস্থা '‌ফ্লিপকার্ট'‌ তাদের প্রকল্প গড়ছে এই রাজ্যে। নদিয়া জেলার হরিণঘাটায় ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে উঠছে '‌ফ্লিপকার্ট হাব'‌। আজ এখানে হবিবপুরে ছাতিমতলার মাঠে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এ কথা জানান। তিনি বলেন, '‌আমরা ওই সংস্থাকে জমি দিয়েছি। ওরা ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে হরিণঘাটায়। এর ফলে সরাসরি ১০ হাজার কর্মসংস্থান হবে। এছাড়াও অনুসারী শিল্প গড়ে উঠবে। তাতেও প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে।'‌

শিল্প গড়ার পাশাপাশি রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নও যে জরুরি, তাও এদিন মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার ওপর দিয়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের ব্যাপারেও এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা। তার কারণ, গত তিন বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের ঢিলেমিতে কাজ থমকে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে জেলার বিভিন্ন রাস্তা ও সেতু নির্মাণের খোঁজখবর নেন। তখনই এসে পড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রসঙ্গ। মমতা চান, মায়াপুর ও পলাশিকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র তৈরি হোক। কাজও এগোচ্ছে। কিন্তু জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ না ঘটলে পর্যটকেরাও সমস্যায় পড়বেন। যাতায়াত ব্যবস্থা সুগম করতে তাই এই কাজ অত্যন্ত জরুরি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নির্দেশ দেন, দ্রুত কথা বলুন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। একইসঙ্গে জনপ্রতিনিধিদেরও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, কেন রাস্তার কাজ শেষ করা যাচ্ছে না, তাও ফ্লেক্স এবং হোর্ডিং টাঙিয়ে সর্বত্র জানিয়ে দেওয়া হোক। তাতে লেখা থাকবে, '‌দুঃখিত, এই জাতীয় সড়ক কেন্দ্রের.‌.‌.‌।' মমতার কথায়, 'এইসব কাজ তাড়াতাড়ি হোক এটাই চাই। ৩ বছর ধরে নাটক চলছে। কালনা থেকে শান্তিপুর এবং বড় জাগুলি থেকে কাঁপা রোড পর্যন্ত নতুন সেতু তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কল্যাণীতে ‌‌এইমস হাসপাতালের কাজ নিয়েও খোঁজ নিয়েছেন মমতা। বলেছেন, '‌এই কাজটিও যাতে ভালভাবে হয় দেখতে হবে। এখানেও প্রচুর কাজের সুযোগ আছে।'‌ তিনি আরও বলেন, '‌ট্রিপল আইটি কল্যাণীতে আছে। সেখান থেকে মেধাবী ছাত্র পাশ করে প্রায় ৯০ শতাংশই কাজ পাচ্ছে। আমাদের কাজের কথা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করুন। হোর্ডিং দিন। মানুষের কাছে যান।'‌ সীমান্তঘেঁষা নদিয়ার নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় নজরদারি বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শান্তিপুর–কালনা নদীর ওপর ব্রিজের কাজ কতটা হয়েছে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তেমনই তাঁত ও মসলিন শাড়ির শিল্প নিয়ে জানতে চান। বিদেশে তাঁতের চাহিদা প্রচুর। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ‌খুব শিগগিরই এখানে '‌এক্সপোর্ট হাব'‌ হবে।

রাজ্য কৃষকদের কাছে সরাসরি ধান কেনার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এদিন মমতা বলেছেন, কৃষকদের দেখুন। ধান কেনার প্রকল্প চালু হয়েছে, যাতে দালালরা ঠকাতে না পারে। এদিন বর্ধমানের ল্যাংচা হাবের মতো নদিয়ায় '‌সরতীর্থ'‌ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে খেজুর গুড়, পোলট্রিতে জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।