কুখ্যাত রামুয়া খুনে নাটকীয় মোড়, গ্রেফতার স্ত্রী-ছেলে


সোদপুরের অমরাবতীর ফ্ল্যাটে কুখ্যাত দুষ্কৃতী রামুয়া খুনে নাটকীয় মোড়। পুরনো সঙ্গী গুড্ডু মানোয়ার নয়, কুখ্যাত দুষ্কৃতী রামুয়াকে খুন করেছে তার স্ত্রী ও ছেলেই। খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে রামুয়ার স্ত্রী কাজল দেওয়ার ও ছেলে সমীরকে। একইসঙ্গে আরও ৩ জনকে  গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিসি জেরায় খুনের কথা কবুল করেছে অভিযুক্তরা।

পুলিসকে ধৃতরা জানিয়েছে, বাড়িতে স্ত্রী, ছেলের উপর খুব অত্যাচার করত রামুয়া। অত্যাচার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। আর তখনই রামুয়াকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়। রামুয়াকে খুনের ছক কষে স্ত্রী ও ছেলে। জেরায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। নেশার ঘোরে ঘুমন্ত রামুয়াকে তার বন্দুক থেকেই গুলি করে ছেলে সমীর দেওয়ার এক বন্ধু। যাতে আওয়াজ না ছড়ায়, তাই বালিসে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় রামুয়ার। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া হাত ও পায়ের ছাপের সঙ্গে মিলে যায় রামুয়ার স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে। আর সেটাই ধরিয়ে দিল খুনিকে।

জানা গিয়েছে, ধৃত ৩ বন্ধুর একজনকে দুর্গাপুর থেকে ও বাকিদের ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। ধৃত প্রশান্ত কুমার সিং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাকি দুজন বিশাল মেনন ও শ্যামসুন্দর রাও দশম শ্রেণি থেকেই সমীর দেওয়ার বন্ধু। ধৃতদের কাছ থেকে নগদ ৩০ হাজার, রামুয়ার বন্দুক ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিস।

প্রসঙ্গত, পুলিসের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড রাম মূর্তি দিয়ার ওরফে রামুয়া আদতে দক্ষিণ ভারতীয়। রামুয়ার বিরুদ্ধে শিবপুর ও হাওড়ায় খুন, তোলাবাজি সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কয়েকবছর এক যুবকের মাথা কেটে খুন করে 'ফুটবল' বানিয়ে খেলেছিল রামুয়া। তারপর থেকেই এলাকার ত্রাস হয়ে ওঠে এই কুখ্যাত দুষ্কৃতী। জমি সংক্রান্ত ব্যবসায় তোলাবাজি নিয়ে রীতিমতো সিন্ডিকেট চালাত সে। রামুয়ার ভয়ে কাঁপত এলাকার প্রোমোটাররা।  তোলাবাজির টাকা না পেলেই প্রোমোটারদের কাছে আসত খুনের হুমকি।

১৬ নভেম্বর জেল থেকে ছাড়া পায় রামুয়া। তারপরই সোদপুরের অমরাবতীর ফ্ল্যাটে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে থাকতে শুরু করেছিল রামুয়া। রবিবার, ১৩ জানুয়ারি রাতে সেই ফ্ল্যাটেই খুন হয় রামুয়া। পুলিসকে প্রথমে রামুয়ার স্ত্রী কাজল দেওয়ার জানিয়েছিল, রাত ১টা নাগাদ জোর করে ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে একদল আগ্নেয়াস্ত্রধারী দুষ্কৃতী। তারা এসে প্রথমে কলিংবেল বাজায়। বেলের আওয়াজ শুনে রামুয়ার এক ছেলে নীচে এসে দরজা খোলে। দরজা খুলতেই তাঁকে পাশে টেনে নিয়ে মুখে চাপা দিয়ে কাবু করে ফেলা হয়। মাথায় ঠেকিয়ে ধরে রাখা হয় রিভলবার।

ছেলেকে কাবু করে ফেলার পরই দুষ্কৃতীদের মধ্যে ৭-৮ জন জোর করে ওপরের তিন তলায় উঠে আসে। সেখানে রামুয়াকে ঘর থেকে টেনে বের করে এনে কানের পাশে ২ রাউন্ড গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গেই তার মৃত্যু হয়। কাজল দেওয়ার পুলিসকে আরও বলেছিল যে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দুষ্কৃতীরা তাদের হুমকি দেয়। পুলিসকে বললে গোটা পরিবারটাকেই শেষ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয় দুষ্কৃতীদল। কিন্তু তদন্ত এগোতেই পুলিস বুঝতে পারে, বিভ্রান্ত করতেই দুষ্কৃতী হামলার 'গল্প' ফেঁদেছিলেন কাজল দেওয়ার। আর তারপরই গ্রেফতার করা হয় রামুয়ার স্ত্রীকে।