শুধু শচীনের ‘ঈশ্বর’ ছিলেন না, ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্রোনাচার্য’ হয়ে উঠেছিলেন আচরেকর


তিনি শিক্ষক। এমন ছাত্র তৈরি করেছিলেন, যাঁর পরিচয়ে বিশ্বের দরবারে তিনি আজ সমাদৃত। সেই ক্রিকেটের 'দ্রোনাচার্য' রমাকান্ত আচরেকর আর নেই। মাস্টারের প্রয়াণে ফের একবার অভিভাবকহীন হলেন মাস্টার ব্লাস্টার। আজও ক্রিকেট অনুরাগীদের চোখে ভাসে শচীন তেন্ডুলকরের বিদায়ী ম্যাচে হুইলচেয়ারে বসে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শচীনের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদের সেই দৃশ্য।

শচীনের 'স্যর'কে ভুলবে না ভারতীয় ক্রিকেট। ক্রিকেটের 'ঈশ্বরে'র গুরু বলে কথা। শুধু শচীন, কত বড় বড় তারকা ব্যাটসম্যান তৈরির কারিগর ছিলেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটকে নেপথ্যে থেকে সারাজীবন সেবা করে গিয়েছেন। তাই তো একটা শচীন তেন্ডুলকর পেয়েছে ক্রিকেট।
দ্রোনাচার্যকে ছাড়া যেমন অর্জুনকে পাওয়া যেত না, তেমনই রমাকান্ত আচরেকরকে ছাড়া পাওয়া যেত না শচীনকেও। স্যরের শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে তা বুঝিয়ে গিয়েছেন স্বয়ং ক্রিকেট-'ঈশ্বর'। এই গুরুই না সবার প্রথম দেখেছিলেন ভবিষ্যতের তারকাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর দিনে সেরা ছাত্রকে দিয়েছিলেন ভালো খেলার স্বীকৃতি।

আট বছর বয়সে দাদা অজিত তেন্ডুলকরের হাত ধরে শিবাজি পার্কে আচরেকরের কোচিং সেন্টারে এসেছিলেন শচীন, তারপর বাকিটা ইতিহাস। শচীনকে নিজের হাতে তৈরি করেছেন। তৈরি করেছেন বিনোদ কাম্বলি, প্রবীন আমরে, অজিত আগরকার, চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত, সমীর দিঘের মতো ক্রিকেটারকে। তাঁরাও ভারতীয় ক্রিকেটকে দিয়েছেন সাধ্যমতো।
এছাড়া মুম্বই ও ভারতের অনেক ক্রিকেটারকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন আচরেকর স্যর। শচীনের পাশাপাশি আরও একটা প্রতিভাকে তিনি সমানভাবে তুলে এনেছিলেন। কিন্তু শচীনের সাফল্য-খ্যাতি তাোঁকে যেমন আনন্দ দিয়েছে, একইভাবে বিনোদ কাম্বলির হারিয়ে যাওয়া তাঁকে একইরকম কষ্ট দিয়েছে। তিনি যে ভালো ক্রিকেটার হওয়ার পাশাপাশি ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতেন। কিন্তু কাম্বলির প্রতিভা বের করে আনলেও তাঁর মাদকাশক্তি ছাড়াতে পারেননি, তাই দুঃখ রয়ে গিয়েছিল তাঁর। তিনি যে আজীবন ছাত্রদের মজ্জায় ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কঠোর পরিশ্রম আর লক্ষ্যে স্থির রাখার মন্ত্র। সেটাই ছিল সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

১৯৩২ থেকে ২০১৯-এর জার্নি শেষ। প্রতিভা তুলে আনার ক্ষেত্রে তাঁর ৮৭ বছরের জীবনে রেখে গিয়েছেন অনেক গল্পগাথা। ১৯৪৩ সালে তাঁর ক্রিকেট জীবন শুরু হয়েছিল। দু-বছর পরেই তিনি নেমেছিলেন ক্লাব ক্রিকেটে। নিউ হিন্দ স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে প্রথম ম্যাচের পর খেলেছেন মহারাষ্ট্র একাদশ, গুলমোহর মিলস ও মুম্বই পোর্টের হয়ে।

প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন মাত্র একটি। ১৯৬৩ সালে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার হয়ে হায়দরাবাদের বিপক্ষে মইন-উদ-দৌলা ক্রিকেট প্রতিযোগিতায়। এরপরই তিনি কোচিং শুরু করেন। ক্রিকেট ময়দানে অর্জূন হতে না পারলেও শিবাজি পার্কের কোচিং সেন্টারে তিনি হয়ে উঠেছিলেল ভারতীয় ক্রিকেটের দ্রোনাচার্য। তুলে এনেছিলেন একের পর এক প্রতিভা। শচীন, কাম্বলি, আগরকর, আমরে- কত নাম সেরার তালিকায়। তাঁর হাত ধরেই উত্তরণ হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটে।

১৯৯০ সালে রমাকান্ত আচরেকর পান দ্রোনাচার্য পুরস্কার। এরপর ২০১০-এ পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন তিনি। রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল তাঁকে পদ্ম সম্মান তুলে দেন। এরপর ওই বছরেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের তৎকালীন কোচ গ্যারি কার্স্টেনের হাত দিয়ে পান লাইভ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার।