ব্রাজ়িলে বাঁধ ভেঙে মৃত ৯, নিখোঁজ অন্তত ৩৪৫

দুর্ঘটনার পর।

দক্ষিণ পূর্ব ব্রাজ়িলের বেলো হরিজ়ন্টে শহরের এক লোহা খনি সংলগ্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে শুক্রবার মৃত্যু হল কমপক্ষে ন'জনের। নিখোঁজ অন্তত ৩৪৫ জন। প্রশাসন জানিয়েছে, উদ্ধারকারী দল শুক্রবার সারা রাত খোঁজ চালালেও লাভ হয়নি। জীবিত অবস্থায় ওই ৩৪৫ জনকে উদ্ধার করার সম্ভাবনা কম বলে মত স্থানীয় গভর্নর রোমিউ জ়েমা-র।
শুক্রবার বেলা একটা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাতটি দেহ উদ্ধার করা হয়। শনিবার উদ্ধার হয় আরও দু'টি দেহ। নিখোঁজদের মধ্যে অন্তত দেড়শো জন ওই খনির প্রশাসনিক দফতরের কর্মী বলে জানায় দমকল। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বাঁধটি যখন ভেঙে পড়ে, তখন খনির প্রশাসনিক ভবনটিতে অন্তত ৪২৭ জন কর্মী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এখনও অবধি ২৭৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। প্রশাসন জানায়, শনিবার প্রায় ২০০ জন উদ্ধার অভিযানে নেমেছিলেন। 

বাঁধটি ভেঙে পড়ায় মাটি এবং জলের স্রোত পাশের ব্রুমাডিনহো শহরের দিকে ধেয়ে আসে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর। শহরের বিশেষ ক্ষতি না হলেও গাছপালা এবং খেত নষ্ট করে ফেলেছে মাটি-জলের স্রোত। পাশাপাশি জলের তোড়ে একটি ব্রিজও ভেঙে পড়েছে বলে খবর। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের পর্দায় দেখা যায়, প্রায় কোমর সমান মাটি জমে গিয়েছে ওই অঞ্চলে। হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হচ্ছে মানুষজনকে। 

পরিস্থিতে সামাল দিতে প্রতিরক্ষা, খনি এবং পরিবেশ মন্ত্রককে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন ব্রাজ়িলের নয়া প্রেসিডেন্ট জৈর বোলসোনারো। তিনি ঘটনাস্থলে যাবেন বলে জানা গিয়েছে। মাটি কাটার সরঞ্জাম নিয়ে উদ্ধারে নেমেছেন দমকলকর্মীরা। হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ছবি তোলার জন্য ড্রোন ব্যবহারে বিরত থাকতে বলা হয়েছে সংবাদমাধ্যমকে।

মাটির মতো খনি-বর্জ্যের ('টেলিং'-এর) এই স্রোত আটকাতে কমপক্ষে দিন দুয়েক সময় লাগবে বলে মত ব্রাজ়িলের ন্যাশনাল ওয়াটার এজেন্সির। তবে এর মধ্যে তা ২২০ কিলোমিটার দূরে রেটিরো বাইক্সো জলবিদ্যুৎ বাঁধের কাছে পৌঁছে যাবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ওই খনি এবং সংলগ্ন বাঁধটি ব্রাজ়িলের বিখ্যাত সংস্থা 'ভেল'-এর। ২০১৫ সালে মারিয়ানার কাছে এক খনি ধসের ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছিল এই সংস্থার। সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ১৯ জনের। শুক্রবারের ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে সংস্থার সিইও ফ্যাবিয়ো স্কোয়ার্টসম্যান বলেন, ''ওই বাঁধটি প্রায় অব্যবহৃতই থাকত। কিছু দিনের মধ্যেই তা ভেঙে ফেলার কথা ছিল। তবে তার আগে হঠাৎ এই বিশাল বিস্ফোরণ হল। এর জেরে টেলিং এবং অন্যান্য বর্জ্য জলের সঙ্গে মিশে অন্য একটি বাঁধের দিকে এগিয়ে যায়। সেটি উপচে বিপত্তি আরও বাড়ে। যদিও এখন এই ব্যাখ্যা  নিষ্প্রয়োজন।''
গত বছর সেপ্টেম্বরেই ভেঙে পড়া বাঁধটি পরীক্ষা করে গিয়েছিল জার্মানির এক সংস্থা। তখন তাতে কোনও  সমস্যা তাদের চোখে পড়েনি বলেই এ দিন জানায় তারা। এই ঘটনায় সরকার এবং খনি সংস্থার দিকেই আঙুল তুলেছে পরিবেশ সংগঠন 'গ্রিনপিস'। তাদের বক্তব্য, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। এই ঘটনা পরিবেশের প্রতি ঘটে চলা অপরাধের প্রতিফলন যার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তি প্রয়োজন। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করা দরকার।