‘বাতিল’ তথ্যপ্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার করলে জেল হবে অফিসারেরই, জানাল সুপ্রিম কোর্ট


'অসংবিধানিক' তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬(এ) ধারা এখনও ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। গ্রেফতারও করা হচ্ছে। এই অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি আবেদনে কেন্দ্রকে তীব্র ভর্ত্সনা করল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার তার রায়ে বিচারপতি রোহিংটন নরিম্যান এবং বিচারপতি বিনিত শরণের বেঞ্চ জানায়, তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৬৬(এ) ধারা 'অস্পষ্ট' এবং 'অসংবিধানিক' বলে বিবেচিত হয়েছে। ২০১৫ সালে এই ধারাটিকে বাতিল করা হয়। এরপরও ৬৬(এ) ধারায় ২২ জনের বেশি গ্রেফতার হয়েছে। এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে কার্যত হুঁশিয়ারি সুরেই আদালত জানায়, যে সব অফিসার গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন, এ বার তাঁদেরই জেলে পাঠানো হবে।

পিপল'স ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) নামে একটি অলাভজনক সংস্থা তাদের আবেদনে জানায়, ন্যাশনাল ব্যুরো অব ক্রাইম, মিডিয়া রিপোর্ট-সহ একাধিক তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গিয়েছে এখনও ৬৬ (এ) ধারা ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এই ধারাকে হাতিয়ার করে গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে। শ্রেয়া সিঙ্ঘল মামালার উল্লেখ করে ওই সংস্থা জানিয়েছে, শীর্ষ আদালতের রায়ের অবমাননা করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট তা স্বীকার করে জানায়, দুর্ভাগ্যজনক তবে এটাই সত্যিই। কেন্দ্রের কাছে ৪ সপ্তাহের মধ্যে জবাব চেয়েছে শীর্ষ আদালত।

উল্লেখ্য, ২০০০ সালে তৈরি হওয়া তথ্য-প্রযুক্তি আইন প্রথম ইউপিএ-র আমলে সংশোধিত হয়। সে সময় ৬৬(এ) ধারা সংযুক্ত করা হয়। ওই ধারায়, অসন্তোষজনক, অসুবিধাজনক, আপত্তিকর বিষয় কম্পিউটারের মাধ্যমে ছড়ালে জেল পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু আদালত জানিয়েছিল, ৬৬(এ) ধারায় 'অসন্তোষজনক', 'অসুবিধাজনক', 'আপত্তিকর' বিষয়টি সুষ্পষ্ট নয়। এনডিএ সরকার এই আইনকে যথাযথ ব্যবহারে নিশ্চিত করলেও বিচারপতি জে চেলমেশ্বর ও বিচারপতি রোহিংটন ফলি নরিম্যানের বেঞ্চ মেনে নেইনি। বিচারপতিদের যুক্তি, সরকার আসবে, যাবে। আইন চিরকাল এক জায়গায় থাকবে। যে আইন স্পষ্ট নয়, সংবিধানবিরোধী সেই আইনকে বলবত্ করার প্রয়োজন নেই।

ইউপিএ সরকারের আমলের ৬৬(এ) ধারায় ২০১২ সালে 'ব্যঙ্গচিত্র' শেয়ার করে গ্রেফতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অম্বিকেশ মহাপাত্র। মহারাষ্ট্রের শাহিন ধাড়া ফেসবুকে বালাসাহেব ঠাকরের মৃত্যুতে মুম্বইয়ে অঘোষিত বন্ধ নিয়ে মন্তব্য করায় হাজতে যেতে হয়। এমনকি ওই পোস্টে লাইক করায় তাঁর বন্ধু রেণুকে গ্রেফতার করা হয়। উত্তর প্রদেশের গুলরেজ খানও এই ধারার শিকার হন।