অফিস থেকে বেরিয়ে আর ধরতে হবে না ‘বস’-এর ফোন!


আপনি কি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন? তবে নিশ্চয়ই ছুটির দিনে কিংবা অফিস থেকে বেরোলেও কাজের চাপ থেকে মুক্তি পান না৷ বসের একের পর এক ফোন কিংবা ই-মেলের মাধ্যমে জেরবার হতে হয় আপনাকে৷ আর অফিসের বাইরে থাকাকালীন বসের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলে তাঁর বিরাগভাজনও হতে হয়৷ এই সমস্যা থেকে বাঁচতে ইচ্ছা না থাকলেও ছুটির দিন কিংবা অফিস থেকে বেরিয়েও বসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন অনেকেই৷ স্বাভাবিকভাবে পরিবারের সঙ্গে নষ্ট হয় সম্পর্ক৷ এই সমস্যা থেকেই এবার মিলতে পারে রেহাই৷ চাকুরিজীবীদের কথা মাথায় রেখে এমনই একটি বিল সংসদে আনলেন এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে৷

শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে এই বিলটি লোকসভায় পেশ করেন এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে। বিলের পক্ষে তাঁর যুক্তি, বেসরকারি ক্ষেত্রে অফিসের কাজের চাপে ব্যক্তিগত জীবন বলে কার্যত আর কিছু থাকে না। প্রায় ২৪ ঘণ্টাই অফিসের কাজের জন্য তৈরি থাকতে হয় কর্মীদের। কখনও বসের ফোন ধরা আবার কখনও ই-মেলের উত্তর দেওয়া তো রয়েছেই৷ আবার তার সঙ্গে অনেককেই বাড়িতেও ল্যাপটপ, কম্পিউটার নিয়ে বসে অফিসের কাজও করতে হয়৷ ধরুন আপনি ভাবলেন ফোন বা ই-মেলের জবাব দেবেন না৷ কিন্তু তাতে শৃঙ্খলাভঙ্গের কোপেও পড়তে হয় কর্মীদের। সুলে বলেন, ''পরিবারের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের ভারসাম্য রক্ষা করতেই 'ডিসকানেক্ট' এবং 'কল রিসিভ' না করার অধিকার দেওয়া দরকার।

বেসরকারি কর্মীদের মূল অধিকারের অংশ প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ নম্বর ধারায়। এর মধ্যে রয়েছে, অফিসের বাইরে কর্মীকে তাঁর 'বস' ফোন করতেই পারেন। কিন্তু সেই কর্মী ফোন না-ও ধরতে পারেন বা ধরলেও উত্তর দিতে না-ও পারেন। ই-মেলের ক্ষেত্রেও একই আইন প্রযোজ্য হবে। এই সব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনার প্রশ্নই নেই। এছাড়াও অন্যান্য ধারাগুলিতে কর্মী কল্যাণ কমিটি গঠন, মালিক পক্ষের সঙ্গে তাঁদের নিয়মিত বৈঠক করার মতো বিষয়েও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বিলে। বেসরকারি সংস্থায় এই সব কারণে কাজের সমস্যা হলে তা মেটানোর জন্য কর্তৃপক্ষকেই পদক্ষেপ করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি বেসরকারি সংস্থাকে তাদের কাজের ধরন বা প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মপদ্ধতি ঠিক করে নিতে হবে, যাতে অফিসের বাইরে থাকা কর্মীদের 'বিরক্ত' না করেও কাজে কোনও প্রভাব না পড়ে। শুধু যে কর্মীদের কথা ভেবেই বিল সংসদে পেশ করা হয়েছে তা নয়৷ সুপ্রিয়া সুলের পেশ করা বিলে রয়েছে 'শাস্তি'-র উল্লেখও৷ ওই বিলে উল্লেখ রয়েছে, কোনও সংস্থা এই আইন না মানলে তাদের কর্মীদের বেতনের এক শতাংশ জরিমানা হিসেবে দিতে হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এড়াতে এবং এর অপকারিতা সম্পর্কে কর্মীদের সচেতন করার জন্য কাউন্সেলিং করার প্রস্তাবও রয়েছে 'রাইট টু ডিসকানেক্ট' বিলে।

সারা বিশ্বের মধ্যে ফ্রান্সই একমাত্র দেশ, যেখানে এই নিয়ম চালু রয়েছে। নিউইয়র্কেও প্রায় একই রকম বিল আনা হয়েছে। এই ধরনের কোনও আইন আনা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে জার্মানিতেও।