বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল বাবা-মা-মেয়ের

বনশ্রী চট্টোপাধ্যায়।

অভাবের জন্য বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারেননি। অথচ, বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে সেই পরিবারেরই স্বামী-স্ত্রী-মেয়ের মৃত্যু হল।

বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের গাবরডা গ্রামে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গ্রাম। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম বিজয় চট্টোপাধ্যায় (৪৩), তাঁর স্ত্রী অতসী (৩৭) এবং মেয়ে তনুশ্রী (৭)। আর এক মেয়ে বনশ্রী এবং প্রতিবেশী সুজিত রায়ের প্রাথমিক চিকিৎসা হয় বসিরহাট জেলা হাসপাতালে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, খুঁটি থেকে ছিঁড়ে মাটিতে পড়েছিল বিদ্যুতের তার। ভোরে প্রাতঃকৃত্য সারতে বেরিয়ে সেই তারেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন পরিবারের কর্তা। চিৎকারে ছুটে আসেন স্ত্রী। স্বামীকে সরিয়ে আনতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনিও। ঘরে ছিল যমজ দুই মেয়ে। ছুটে আসে তারা। মারা গিয়েছে তাদের এক জন। 

এ দিন ঘটনাস্থলে আসেন স্বরূপনগরের বিডিও বিপ্লব বিশ্বাস, বিদ্যুৎ দফতরের কাটিয়াহাট শাখার স্টেশন ম্যানেজার গোপাল বিশ্বাস। বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতিতেই এমন দুর্ঘটনা বলে ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রত্যেকের জন্য অন্তত ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে জানান গোপাল। তাঁর কথায়, ''২০১১ সালে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গাবরডা গ্রামে বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছিল। পরে ছোটখাটো মেরামতি ছাড়া তার বদলানো হয়নি। তবে দুর্ঘটনার পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, গ্রামে আরও একটি ট্রান্সফর্মার বসানো হবে। খোলা তারের বদলে ঢাকা কেব‌্‌লের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

স্বরূপনগর ব্লকের কৈজুড়ি পঞ্চায়েতের বৈকাড়া খালের এক পাশে গাবরডা, অন্য পারে বাংলাদেশের বৈকাড়া গ্রাম। ব্রাহ্মণপাড়ায় বাঁশের বেড়া, টিনের চালের ঘর বিজয়দের। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ ও পুজোআচ্চা করে আয় করতেন তিনি। অতসী পালাগান করতেন। তাঁদের যমজ সন্তান তনুশ্রী ও বনশ্রী দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

স্থানীয় বাসিন্দা ভোলানাথ মণ্ডল, বিশ্বনাথ মণ্ডল, লক্ষ্মী রায় বলেন, ''কয়েক বছরে বহু বার বিদ্যুতের তার ছিঁড়েছে। বার বারই সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হলেও তার বদল হয় না।''

ফাঁকা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ছোট্ট বনশ্রীর প্রশ্ন, ''বাবা, মা, বোন কোথায় গেল? কার কাছে থাকব? কার সঙ্গে খেলব?''