মানবিকতার নজির, অনাথ পাত্রীর সঙ্গেই দত্তক নেওয়া ছেলের বিয়ে দিলেন অধ্যাপিকা


হুগলি:  মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসাই আর একটা মানুষকে কাছে এনে দেয়, একে অপরকে আপন করে নেয়। এটাই মানব ধর্ম। সেই মানব ধর্মই আজ দু'টো মানুষের চার হাত এক করে দিল। উত্তরপাড়ার ডেস্টিচিউট হোম ফর উইমেনের ২২ বছরের গোলাপ তাঁর জীবনসঙ্গী হিসেবে খুঁজে পেল রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়কে। সঙ্গীর হাত ধরেই গোলাপ বৃহস্পতিবার নতুন জীবনের পথে এগিয়ে গেল। অগ্নিকে সাক্ষী রেখে রীতিমতো একে অপরের সুখ দুঃখের সাথী হওয়ার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হল দুটি সরল হৃদয়।উত্তরপাড়া হোমে যেন খুশির জোয়ার। খুশি হোমের সুপার শীলা কুন্ডু-সহ অন্যান্য আবাসিকরাও। স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব সমস্ত কাজ ফেলে রেখে হোমে এসে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করেন৷ 

ছোটবেলায় মা-বাবা ফেলে চলে যায় গোলাপকে৷ তারপর থেকে হোমেই বড় হয় গোলাপ সাহা৷ লিলুয়া হোমে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনো করার পর মেদিনীপুরে থেকে মাধ্যমিক পাশ করে। তারপর দু'বছর আগে উত্তরপাড়া হোমে গোলাপ আসে সেলাইয়ের কাজ শিখতে।  গোলাপের স্বামী রঞ্জিতের জীবনও প্রায় একইরকম৷ ছোটবেলাতেই রঞ্জিত দুর্ঘটনায় তাঁর বাবা-মা দুজনকেই হারায়। তারপর থেকে একা হয়ে যায় রঞ্জিত। কিন্তু, মনের অদম্য ইচ্ছা বড় হওয়ার। তাই কখনও দুধ বিক্রি করে আবার কখনও লোকের  বাড়িতে কাজ করে পড়াশুনো চালিয়ে যেতে থাকে সে। বেলুড় থেকে আইটিআই পাশ করার পর একটি সংস্থায় কাজও পায় সে৷ ২০ বছরের যুবক রঞ্জিত যখন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন বজবজের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যাপিকা সুম্মি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এই অধ্যাপিকাই তার জীবনে মা হয়ে পাশে দাঁড়ান। অধ্যাপিকা  ২০ বছরের যুবক রঞ্জিতকে আইনমাফিক পুত্র হিসেবে দত্তক নেন। তারপর অবশ্য রঞ্জিতকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাতৃস্নেহে তার জীবনের লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়ে সুম্মি দেবী ওই যুবককে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগান।

দত্তক নেওয়ার পর ছেলের বিয়ে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করেন সুম্মি দেবী৷ তিনি বলেন, ''ছেলের জন্য যখন পাত্রী খোঁজার সময় রাজ্যের বিভিন্ন হোমগুলিতে ছেলের পাত্রী খোঁজার জন্য আবেদন জানান।'' কিন্তু হোমের ক্ষেত্রে অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত উত্তরপাড়ার হোম কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয়৷ হোমে এসে গোলাপকে দেখার পর প্রথম দর্শনেই পছন্দ হয়ে যায় রঞ্জিত ও তাঁর পালিতা মায়ের৷ বৃহস্পতিবারই চার হাত এক হয় দুজনের। সুম্মি দেবী বলেন, ''আজকে ছেলের বিয়ে দিয়ে বৌমা নয় মেয়েকে ঘরে নিয়ে যাচ্ছি৷ এখন থেকে আমি তিন সন্তানের মা।'' পাশাপাশি গোলাপ ও রঞ্জিত দুজনেই তাদের জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়ে ভীষণ খুশি। কেমন লাগছে প্রশ্ন করায় দুজনেই লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেন৷ গোলাপ চলে যাবে তার শ্বশুরবাড়িতে। তাই একধারে খুশির হাওয়া আবার অন্যদিকে সন্তান স্নেহে প্রত্যেক মেয়েকে বড় করে তোলা হোম সুপার শীলা কুন্ডুর কিন্তু মন ভার।