ট্রেন ধরতে গেলেও এ বার ‘চেক ইন’


শেষ মুহূর্তে দৌড়তে দৌড়তে স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন ধরার দিন এ বার শেষ হতে চলেছে! দূরপাল্লার ট্রেনের ক্ষেত্রে অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে স্টেশনে এসে 'চেক ইন' করতে হবে। বিমানবন্দরে যেমনটা করতে হয় আর কী। তার চেয়ে দেরি করে এলে যাত্রা পণ্ড। আপনার হাতে যতই সংরক্ষিত টিকিট থাক না কেন। দেশ জুড়ে ২০২টি স্টেশনে এমন ব্যবস্থা চালু করার নীল নকশা তৈরি বলে আজ সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন আরপিএফের ডিজি অরুণ কুমার। যে তালিকায় রয়েছে এ রাজ্যের শিয়ালদহ স্টেশনও। ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে হাওড়া, খড়্গপুর-সহ অন্যান্য স্টেশনেও এই 'চেক ইন' চালু হবে বলে রেল সূত্রের খবর। 
কেন এই তোড়জোড়? আরপিএফের দাবি, সবটাই যাত্রী সুরক্ষার স্বার্থে। নিরাপত্তা বাড়াতে বিমানবন্দরের মতো স্টেশনের প্রতিটি প্রবেশপথে বিশেষ 'সিকিয়োরিটি গেট' বসানোর কথা ভাবছে রেল। স্টেশন চত্বরে সিসি ক্যামেরা বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রী এবং তাঁদের মালপত্রও বেশ কয়েক বার যাচাই করার কথা ভাবা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরায় বসানো হবে 'রিয়েল-টাইম ফেস রিকগনিশন' সফটওয়্যার। এই প্রযুক্তিতে যদি কোনও দাগি অপরাধীকে শনাক্ত করা যায়, অবিলম্বে সেই খবর চলে যাবে আরপিএফের কাছে। যাবতীয় এই যাচাই-পরীক্ষা চালাতেই ট্রেন ছাড়ার ১৫-২০ মিনিট আগে যাত্রী-উপস্থিতি নিশ্চিত করার কথা ভাবছে বাহিনী। 

চলতি মাসে কুম্ভ মেলায় বিপুল জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ (ইলাহাবাদ) এবং কর্নাটকের হুবলি স্টেশনে ইতিমধ্যেই এমন উচ্চ-প্রযুক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থার কিছু-কিছু চালু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন আরপিএফ কর্তারা। 
কিন্তু বিমানবন্দরের মতো ব্যবস্থা কি রেল স্টেশনেও চালু করা সম্ভব? অরুণ কুমার বলেন, ''প্রাথমিক ভাবে স্টেশনের প্রবেশপথ চিহ্নিত করে কোথায়-কোথায় তা সিল করা যায়, তা নিয়ে ভাবনা চলছে। কিছু অংশে স্থায়ী দেওয়াল বসানো হবে। কোথাও কোলাপসিবল গেট কিংবা আরপিএফ আটকাবে প্রবেশপথ।''
নিরাপত্তা খাতে এই কড়াকড়ির ভাবনা অবশ্য নতুন নয়। ২০১৬-য় 'ইন্টিগ্রেটেড সিকিয়োরিটি সিস্টেম' সংক্রান্ত যে পরিকল্পনা পাশ হয়েছিল, এ সব তারই অংশ। সব মিলিয়ে ৩৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প। যদিও এর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। প্রশ্ন উঠছে, এমন বহুস্তরীয় যাচাই-পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়ে। আরপিএফের ডিজি যদিও বলেছেন, ''আধুনিক প্রযুক্তি আনতে পারলে, লোকবল কমই লাগবে।''

চেক-ইন চালু করার পিছনে মূল উদ্দেশ্য, স্টেশন চত্বরে অবাঞ্ছিত আনাগোনা আটকানো। যদিও এমন ব্যবস্থাপনা শুধু বড় এবং প্রান্তিক স্টেশনেই করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।