১২ বছর অপেক্ষার পর ভারতের নাগরিক হলেন ১০১ বছরের এই পাক হিন্দু মহিলা

১০১ বছরের যমুনা মাই।
ভারতের নাগরিক হওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে যমুনা মাই।

শুক্রবারের সূর্যাস্তই যেন সুর্যোদয় হয়ে এল ১০১ বছরের যমুনা মাইয়ের জীবনে। ১২ বছর অপেক্ষার পর শেষমেশ ভারতের বাসিন্দা হলেন পাকিস্তানে বসবাসকারী এই হিন্দু মহিলা।

পাকিস্তানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১০১ বছর বয়সী যমুনা মাই প্রবীণতম মহিলা, যাঁকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হল। যোধপুরের ছোট্ট পল্লী সোধা রি ধানি-তে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে থাকবেন যমুনা। স্থানীয় সূত্রে খবর, এর আগে কখনও এত জাঁকজমক ভাবে অভ্যর্থনা আর কাউকে জানানো হয়নি, যতটা যমুনা মাইকে জানানো হল। ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ ধারায় ভারতের নাগরিক হতে আবেদন জানিয়েছিলেন যমুনা মাই। আর গত ১২ বছর ধরে অপেক্ষা করার পর গত শুক্রবারই যমুনা মাইকে ভারতবর্ষের নাগরিক হওয়ার জন্য অনুমোদন জানায় পাক সরকার। পাকিস্তানের নাগরিকত্ব ছেড়ে ভারতের নাগরিক হওয়ার সমস্ত কাগজপত্র সে দিনই সই করেন যমুনা দেবী।

পুরো প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির কথায়, জোধপুরের নাগরিক ক্যাম্পে থাকাকালীনই তাঁরা জানতে পেরেছিলেন যে, ভারতের নাগরিক হতে এক পাকিস্তানী হিন্দু আবেদন জানিয়েছিলেন যাঁর জন্ম ১৯১৮ সালে। আবেদনকারীর রেকর্ড অনুযায়ী, পঞ্জাবে জন্ম হয়েছিল যমুনা মাইয়ের। জোধপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক জহর চৌধরির কথায়, "শুক্রবারই যমুনা দেবীর আবেদন অনুমোদিত হয় এবং সে দিন সন্ধ্যেতেই তাঁকে ভারতীয় নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।"

ঘটা করে জোধপুরে আমন্ত্রণ জানানো হয় যমুনা দেবীকে। ছেলেদের সঙ্গে নাচতে নাচতে হয় জোধপুরের সোধা রি ধানি এলাকায় প্রবেশ করেন ১০১ বছরের যমুনা দেবী। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে একটি দু-কামড়ার বাড়িও দেওয়া হয় এই মহিলাকে।

অগস্ট ২০০৬ সালে ধর্মীয় ভিসার সাহায্যে মেঘওয়াল পরিবারের ১৫ জন সদস্য অত্তরি-ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসেন। সে বছরেই ভারতের নাগরিক হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন ১০১ বছরের এই মহিলা। বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত রহিম ইয়ার খান জেলায় চাষবাস করেই দিনগুজরান হতো যমুনাদেবীর। কোনও ছুটি পেতেন না, পারিশ্রমিকও পেতেন খুবই অল্প। সঙ্গে কাজও করতে হত দীর্ঘ সময়ের জন্য— দিনের পর দিন এ ভাবেই কাজ করে যেতে হত যমুনা মাইকে। শুধু ভিন ধর্মী বলেই নয়। জমিহারা প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারের সঙ্গেই এ রকম ব্যবহার করা হত বলে জানিয়েছে যমুনাদেবী।

তবে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর যমুনাদেবীর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। যমুনাদেবীর বড় ছেলে আত্মারাম তাঁর সঙ্গেই ভারতবর্ষে ফিরে এসেছেন। মাইয়ের আর এক ছেলে এখনও পাকিস্তানেই রয়েছেন। আত্মারামের কথায়, ''মুসলিম জমি মালিকদের সঙ্গে রাতারাতি আমাদের সম্পর্ক বদলে যায়। আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য প্রচণ্ড আতঙ্কের একটা সময় সেই তখন থেকেই শুরু হয়ে যায়। ২০০০ সালে আমরা ঠিক করি পাকিস্তান ছেড়ে চলে যাব। আর ২০০৬ সালে আমাদের পূর্বপুরুষদের সব জমিও আমরা ছেড়ে দিই।"