বিরল ঘটনা, মেডিক্যাল কলেজে জন্মাল ‘জায়ান্ট ফেস’ শিশু


পুরো মাথা নয়। শুধু দু'গালের নিচ থেকে শুরু করে চোয়াল পর্যন্ত অংশটা। সদ্যোজাত শিশুর শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় এই অংশটুকু এতটাই বড় যে, দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। উপরন্তু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রথম কান্নার সময় মুখ সেই যে হাঁ হয়েছিল, আর বন্ধ হয়নি!  কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমনই বিরল শারীরিক বিচ্যুতি নিয়ে জন্মানো এক শিশুর মৃত্যু হল চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই। ডাক্তারবাবুরা অবশ্য জানাচ্ছেন, এই মৃত্যু প্রত্যাশিতই ছিল। চিকিৎসা পরিভাষায়  শিশুটি জন্মেছিল 'সিস্টিক হাইগ্রোমা' নিয়ে। এটি ক্রোমোজমঘটিত অস্বাভাবিকতা। পঞ্চাশ হাজারে একজনের মধ্যে এই অসুখ দেখা যায়। ফলে অত্যন্ত বিরল ঘটনাই বলা যায়। শুক্রবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে টি এস বাগের অধীনে জন্ম নেয় শিশুটি।

কৃষ্ণনগরের ফরিদা বেগমই হতভাগ্য এই শিশুটির মা। হুগলির চণ্ডীতলার গরালগাছায় শ্বশুরবাড়ি ফরিদার। পেটে সন্তান থাকা অবস্থায় তিনি বুঝতেও পারেননি এমনটা হতে পারে। সন্তানসম্ভবা ফরিদা বাইরের জেলা থেকে রেফার হয়ে মেডিক্যাল কলেজে এসেছিলেন। শুক্রবার মেডিক্যাল কলেজে এমন দৈত্যাকার সন্তানের জন্ম দেন ফরিদা। বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটির আয়ু শেষ হয়ে গেল মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা। সন্তানকে হারিয়ে অবশ্য ভেঙে পড়েননি বছর তেইশের ওই গৃহবধূ। বরং তিনি বলছেন, " বেঁচে থাকলেই  ও কষ্ট পেত। মা হয়ে আমি সন্তানের কষ্ট দেখব কী করে।" 

কিন্তু, কীভাবে সদ্যোজাতদের চোয়াল প্রকাণ্ড আকার ধারণ করে? চিকিৎসকরা বলছেন, গলার কাছে লসিকা জমে দৈত্যাকৃতি ব্যাগের মতো তৈরি হয়। তাতেই প্রকাণ্ড আকার ধারণ করে মুখ। সাধারণত এই শিশুরা জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়। অদ্ভুতভাবে এই শিশুটি শনিবার দুপুর পর্যন্ত বেঁচে ছিল। তাও ভেন্টিলেশন ছাড়াই। জন্মের পরেই শিশুটিকে নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা নিকু-তে নিয়ে যাওয়া হয়। ডা. টি এস বাগ জানিয়েছেন,  সাধারণত গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের মধ্যে এমন অস্বাভাবিকতা ধরা পড়লে গর্ভপাত করানো যেতে পারে। কিন্তু এই প্রসূতি ৩০ সপ্তাহে ছিলেন। তাই গর্ভপাত করানো যায়নি। জন্মের পরই শিশুটিকে ক্যারিওটাইপিং করার চেষ্টা হচ্ছিল। এদিকে এমন ঘটনায় রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিল ফরিদার পরিবার। চিকিৎসকরাই তাঁদের অভয় দেন। লিম্ফেটিক সিস্টেমে ব্লকেজ থাকায় ফ্লুইড জমে মুখটা  বিশাল বড় হয়ে যায়। ডা. বাগ জানিয়েছেন, এই শিশুটির মুখটি একটু বেশিই বড় ছিল। ক্রোমোজোম ঘটিত অস্বাভাবিকতা থাকলেও সাধারণত এত বড় মুখের শিশু জন্মায় না।