রাতের হাওড়া স্টেশন এখন যেন ধর্মশালা


স্টেশন নয়, যেন ধর্মশালা! রাত গড়ালেই হাওড়া স্টেশনের পরিস্থিতি রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বড়সড় প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। সশস্ত্র রেলরক্ষী, 'সতর্ক' রেলপুলিশ এবং অজস্র রেলকর্মীর ভিড়ে গমগমে হাওড়া স্টেশনেই সন্ধে থেকে আশ্রয় নিতে শুরু করেন বহু মানুষ। তাঁদের কাছে টিকিট নেই, তাঁরা গভীর রাতের যাত্রীও নন। তা হলে এঁরা কারা? কী করেন? সারাদিন কোথায় থাকেন? তার উত্তর নেই কারও কাছেই। সন্ধের পর থেকেই গুটি গুটি পায়ে তাঁদের স্টেশনে আবির্ভাব।

হাওড়া ও শিয়ালদহ। শহরের বুকে দু'টো রেলস্টেশন। জনসংখ্যার নিরিখে দেশের ব্যস্ততম স্টেশনের অন্যতম হাওড়া ও শিয়ালদহে রাতের ছবি একেবারে উল্টো। শিয়ালদহে যখন রাত বাড়লে প্রতি প্ল্যাটফর্মে টহলদারি চালিয়ে অনভিপ্রেত লোকজনকে ধরে ধরে স্টেশন থেকে বের করতে শুরু করেন রেলরক্ষীর দল, তখন হাওড়ায় একঘুম হয়ে গিয়েছে অনামী বহিরাগতদের। হাওড়া স্টেশনে এটিএম-এর সামনে, দূরপাল্লার ট্রেনের জন্য অপেক্ষার জায়গায় এবং আরও কয়েকটা নির্দিষ্ট জায়গাই বহিরাগতদের প্রতিদিনের বসবাসের জায়গা। একই জায়গায় রাত্রিযাপনের ধরন দেখে বুঝতে কষ্ট হয় না নিরাপত্তারক্ষীদের পূর্ণ মদতেই এই ব্যবস্থা চলছে।

দেশের সংবেদনশীল রেলস্টেশনগুলোর অন্যতম হাওড়া। একাধিকবার এই স্টেশনে জঙ্গিহানার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। এই স্টেশনের মাধ্যমেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করেছে জঙ্গিরা --- এমন তথ্যও একাধিকবার পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এদের মধ্যে রয়েছে ১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণের ঘটনায় এক অভিযুক্তও। এত কিছুর পরেও রাত হলেই ধর্মশালার ভূমিকা পালন করে হাওড়া। রাত ন'টা-সাড়ে ন'টার পর থেকেই কার্ড-বোর্ড, মাদুর, চাদর, বালিশ ইত্যাদি নিয়ে রীতিমতো বিছানা পেতে রাত কাটানোর তোড়জোড় শুরু হয় এখানে।
হাওড়ার নিত্যযাত্রীদের একাংশ এই ঘটনায় চিন্তা প্রকাশ করেছেন। যেমন, শ্রীরামপুরের স্নেহাংশু ঘোষ। রাতের হাওড়া সম্পর্কে স্নেহাংশু বলছেন, 'রোজই দেখি এই ধরনের লোকজনকে। খুব স্বাভাবিক ভাবে স্টেশনে ঢোকেন বেরোন। কেউ টিকিট চান না। রেলরক্ষীকে কখনও দেখিনি এঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।' পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ মধুরিমা চৌধুরীর বাড়ি ফিরতে প্রায়ই রাত হয়। তিনি বলছেন, 'হতে পারে ওঁদের থাকার জায়গা নেই। ওঁরা কোথায় থাকবেন সেটা ঠিক করা প্রশাসনের দায়িত্ব। স্টেশন তো থাকার জায়গা নয়।'

স্টেশনের দায়িত্বে থাকা পদস্থ কর্মীদের একাংশই সন্তুষ্ট নন। তবে তাঁরা হাওড়ার কিছু অসুবিধার কথাও তুলে ধরেন। রেলকর্মীরা জানাচ্ছেন, হাওড়া স্টেশনের বিস্তার শিয়ালদহের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তাই হাওড়ায় নজরদারি করার কাজটা কঠিন। এর পাশাপাশি রয়েছে রাতে যাতায়াত ট্রেনের সংখ্যাও। তবে, এই দুই বিষয়কে অজুহাত হিসাবে না দেখিয়ে রেলকর্মীদেরই একাংশ এককথায় রেলরক্ষীদের গাফিলতির দিকে আঙুল তুলেছেন। পূর্বরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলছেন, 'রাতের স্টেশনের নিরাপত্তার আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাঝে-মাঝেই রেলরক্ষীদের ড্রাইভ চলে। এই অভিযানের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। নিরাপত্তা-ব্যবস্থার গাফিলতি পূর্ব রেল হালকা ভাবে নেবে না।'