চিনের অস্বস্তি বাড়িয়ে ভারতের সঙ্গে যৌথ মহড়ায় আসছে আফ্রিকার ১২ দেশ


আন্তর্জাতিক প্রভাব বৃদ্ধির আসরে ফের মুখোমুখি ভারত-চিন। গত বেশ কিছু বছর ধরে আফ্রিকার দেশগুলিতে প্রভাব বাড়িয়ে চলছিল চিন। অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক তো বটেই, সামরিক ক্ষেত্রেও চিনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল আফ্রিকার অধিকাংশ দেশের। ভারত তো বটেই, আমেরিকাও প্রভাব বৃদ্ধির এই খেলায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল চিনের চেয়ে। কিন্তু একটি সামরিক মহড়ার সাম্প্রতিক ঘোষণা আচমকা চাপে ফেলেছে বেজিংকে। আফ্রিকা মহাদেশের ১২টা দেশকে নিয়ে মহারাষ্ট্রে বিরাট সামরিক মহড়ার আয়োজন করছে নয়াদিল্লি।

মহারাষ্ট্রের পুণেতে মহড়াটি আয়োজিত হচ্ছে। ঔন্ধ মিলিটারি স্টেশনে ১২টি দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে মহড়া দেবে ভারতীয় বাহিনী। মহড়াটি শুরু হবে আগামী ১৮ মার্চ। চলবে ১০ দিন।

আফ্রিকা থেকে কোন কোন দেশ আসছে এই মহড়ায় যোগ দিতে? নয়াদিল্লি সূত্রের খবর, নাইজিরিয়া, মিশর, ঘানা, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, সেনেগাল, তানজানিয়া, জাম্বিয়া, নামিবিয়া, মোজাম্বিক, উগান্ডা— এই ১২টি দেশের সশস্ত্র বাহিনী ভারতীয় সেনার সঙ্গে মহড়া দিতে মহারাষ্ট্রে আসছে। ভারতের সঙ্গে এই ১২ দেশের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে দু'দফা সম্মেলন সেরে ফেলেছেন। কী ভাবে এবং কোন কোন বিষয়ে মহড়া হবে, ওই দু'দফা সম্মেলনেই তা নির্ধারিত হয়েছে।

ভারত ও আফ্রিকার দেশগুলি সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানেরমহড়া দেবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তি বাহিনীর অংশ হিসেবে ভারত বহু বছর ধরে আফ্রিকার গৃহযুদ্ধ দীর্ণ দেশগুলিতে যে শান্তিরক্ষার কাজ করে আসছে, তার মহড়াও পুণেতে হবে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে। সমন্বয় বাড়ানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত।

এই মহড়াকে সহজ ভাবে নেওয়ার কোনও উপায়ই চিনের নেই— বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠার লক্ষ্যেই আফ্রিকার দিকে বিশেষ করে নজর দিয়েছিল চিন। গত বেশ কিছু বছর ধরে আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে নানা আর্থিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে তারা। যার সুবাদে অনেকগুলো আফ্রিকান দেশের বাজারই এখন চিনের দখলে। ভূকৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল 'হর্ন অব আফ্রিকা'য় (জিবুটি) চিন পুরোদস্তুর সামরিক ঘাঁটিও বানিয়ে ফেলেছে। দীর্ঘ দিন ধরে আফ্রিকার উপরে যে ভাবে প্রভাব বাড়িয়েছে চিন, ভারত তাতে ভাগ বসাক, এমনটা বেজিং কিছুতেই চাইবে না। তাই আফ্রিকা মহাদেশেরই ১২টি দেশ একযোগে ভারতের নেতৃত্বে সামরিক মহড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বেজিঙের অস্বস্তি ক্রমশ বাড়ছে।

জিবুটির চিনা সামরিক ঘাঁটির পাল্টা হিসেবে আরব সাগরের বুকে সেশ্যেলসের অ্যাসাম্পশন আইল্যান্ডে সামরিক ঘাঁটি তৈরির কাজ শুরু করেছে ভারত। চিনের অস্বস্তি তখন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে। এ বার আফ্রিকার ১২টি দেশ ভারতের সঙ্গে আরও মজবুত সামরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার যে সিদ্ধান্ত নিল, তা চিনের পছন্দ হবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণই নেই— বলছে কূটনীতিক মহল।