স্বামীর সঙ্গে বান্ধবীর প্রেম, বিচ্ছেদ, আর্থিক অনটন-গড়ফায় ৩ জনের আত্মহত্যার চেষ্টায় নয়া তথ্য


আর্থিক অনটন সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চরম মানসিক অবসাদ... গড়ফায় একই পরিবারের তিন জনের আত্মহত্যার চেষ্টার নেপথ্যে উঠে আসছে এই তথ্য। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধা বাসন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মেয়ে অনিন্দিতা পাল ও নাতি ঋষভ।

অনিন্দিতার শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। পুলিসের কাছে বয়ান দিয়েছেন অনিন্দিতা।  বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের বেডে শুয়েই ভাঙা গলায় পুলিসকে জানিয়েছেন, "কেন বাঁচালেন আমায় বলুন তো? আমি বাঁচতে চাই না। আর পারছি না..."

আসলে  সম্পর্কের টানাপোড়েন তো ছিল, তার উপর বিশেষভাবে সক্ষম ছেলের চিকিত্সায় আর্থিক অনটন-সবেতে নাজেহাল হয়ে পড়েছিলেন অনিন্দিতা। কয়েক বছর আগে রাজীব মিত্রের সঙ্গে বিয়ে হয় অনিন্দিতার। বাপেরবাড়ির ফ্ল্যাটের সামনেই একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তাঁরা। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই তাঁদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না বলে জানান প্রতিবেশীরা। প্রায়শই তাঁদের মধ্যে অশান্তি হত। এরপর তাঁদের ছেলে ঋষভের  জন্ম হয়। কিন্তু এরই মধ্যে অনিন্দিতার এক বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে রাজীবের। অনিন্দিতা বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেন। তাতে হেরে যান তিনি। এরপর ছেলেকে নিয়ে বাপেরবাড়ির ফ্ল্যাটে চলে যান।

সেখানেই থাকতে শুরু করেন অনিন্দিতা। রাজীবও ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যান। ঋষভ জন্ম থেকেই বিশেষভাবে সক্ষম। তার চিকিত্সার জন্য ৫ বার চেন্নাইতেই গিয়েছিলেন অনিন্দিতা। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। উপরুন্তু অনেক টাকা খরচ হয়ে যায় তাঁর। এরপর বাবা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হলে আর্থিক অনটন আরও গ্রাস করে। ঋষভের চিকিত্সা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। এরপরই বাড়ির তিন জনে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।

পাড়া প্রতিবেশীর সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা করতেন না অনিন্দিতা বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা। শনিবার সন্ধ্যায় শেষ প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। এরপর থেকে ওই পরিবারের কাউকেই আর দেখতে পাওয়া যায় না। প্রথমে প্রতিবেশীরা ভেবেছিলেন, ছেলের চিকিত্সার জন্যই হয়তো আবার বাইরে গিয়েছেন অনিন্দিতা। বুধবার সকাল থেকে এলাকায় দুর্গন্ধ বেরোনোয় এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। গন্ধের উত্স খুঁজে তাঁরাই পুলিসে খবর দেন। পুলিস গড়ফার ফ্ল্যাটের মধ্যে থেকে বাসন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিথর দেহ উদ্ধার করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় অনিন্দিতা ও ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।