বিশ্বরেকর্ডের দোরগোড়ায় বাঙালি পর্বতারোহী


কলকাতা: পর্বতারোহণের নতুন বিশ্বরেকর্ডের দোরগোড়ায় এক বাঙালি। সর্বকনিষ্ঠ অভিযাত্রী হিসেবে পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ও আগ্নেয়গিরি জয়ের সাফল্য এক বঙ্গসন্তানের মুঠোয় আসা আর কয়েকদিনের অপেক্ষা। মাত্র ৩৫ বছর ২৯০ দিন বয়সি সত্যরূপ সিদ্ধান্ত এ মাসের মাঝামাঝিই এই অনন্য কীর্তিলাভের উদ্দেশে যাত্রা করছেন। এই অভিযান সফল হলে সত্যরূপ অস্ট্রেলিয়ার ড্যানিয়েল বুলের রেকর্ড ভেঙে দেবেন। বুল রেকর্ড করেছিলেন ২০১৭ সালে ৩৬ বছর ১৫৭ দিন বয়সে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ইতিমধ্যেই সত্যরূপের আবেদন গ্রহণ করেছে।

ছোটবেলা থেকেই হাঁপানির সমস্যা ছিল সত্যরূপের। ১০০ মিটার দৌড়তে গেলেও ইনহেলার সঙ্গে রাখতে হত। তখন কোনওদিন হয়ত ভাবেননি বিশ্বের একের পর শৃঙ্গ জয় করে রেকর্ড বুকে নাম তুলবেন। বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গকে কাছ থেকে দেখার পর কে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে! কিন্তু, ২০১০ সালে যেমনটা হয়েছিল তাঁর ক্ষেত্রে। তাই পরের বছরই পর্বতারোহণের প্রথাগত প্রশিক্ষণ নিয়ে বিশ্বের একের পর শৃঙ্গ জয়ের যাত্রা শুরু করেন তিনি। ২০১২ সালে শুরু হওয়া সেই যাত্রার লক্ষ্যমাত্রার একেবারে শেষ ধাপে পৌঁছে গিয়েছেন। এখন বিশ্বরেকর্ডের দরজার দাঁড়িয়ে স্বভাবতই খুব খুশি তিনি।

হাঁপানির সমস্যায় জর্জরিতদের পর্বতশৃঙ্গ অভিযান যেখানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের সমান। তাই চলতি সপ্তাহেই আন্টার্কটিকার উদ্দেশে যাত্রা শুরুর সময় সত্যরূপের দাবি, শুধুমাত্র শৃঙ্গ জয়ই নয়— তাঁর এই জয় যেন আগামী প্রজন্মের কাছে এক উদাহরণ হয়ে থাকে, সেটাই তাঁর লক্ষ্য।

কলকাতায় জন্ম হলেও সত্যরূপের ছোটবেলা কেটেছে বহরমপুরে। সেখানেই পড়াশোনা করে বড় হয়ে ওঠা। তারপরে বি-টেক পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে ২০০৫ সালে বেঙ্গালুরুতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরিতে যোগদান। ২০১১ সালে দার্জিলিং মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে পর্বতারোহণের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে নেন তিনি। এরপরে ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে যায় যাত্রা।

প্রথমটা শুরু হয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ তথা সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি শৃঙ্গ কিলিমাঞ্জারো জয়ের মাধ্যমে। এরপরে ২০১৩ সালে ইউরোপের মাউন্ট এলব্রুস। ২০১৪ সালে দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আর্জেন্টিনার মাউন্ট অ্যাকনকাগুয়া জয়। সেই বছরই উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ডেনালি জয়। পরের বছরই অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট কোসিউজকো। এরপর ২০১৬ সালের ২১ মে জয় করলেন এভারেস্টও। ২০১৭ সালে ওশিয়ানিয়ার কার্স্টেনেজ পিরামিড এবং আন্টার্কটিকার মাউন্ট ভিনসন ম্যাসিফ জয়। এরপর একের পর এক বিশ্বের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি শৃঙ্গ মাউন্ট ওজোস ডেল সালাডো সহ মাউন্ট দামাবন্দ, গিলাউয়ি, পিকো ডে ওরিজাবা জয় করা। এবার শেষ লক্ষ্য আন্টার্কটিকার মাউন্ট সিডলে।