ছ’বছর আগে ব্যাঙ্কে জমা করা টাকার হিসেবও এবার চাইতে পারে আয়কর দপ্তর


কলকাতা: ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে নোট বাতিল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি সাফাই দেন, কালো টাকা উদ্ধারে এটাই তাঁর মোক্ষম চাল। হুঁশিয়ারি দেন, নোট বাতিলের পর ব্যাঙ্কে বড় অঙ্কের টাকা জমা হলে, তা নজরে আনবে আয়কর দপ্তর। কোথা থেকে সেই টাকা এল, তার জবাবদিহি করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। নোট বাতিলের পর দু' বছর কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত কালো টাকা নিয়ে তেমন বড় কোনও সাফল্য পায়নি সরকার। এবার তাই এ রাজ্যের জন্য আরও কঠিন রাস্তা ধরতে চলেছে আয়কর বিভাগ। ছ'বছর আগে থেকে যাঁরা বড় অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্কে জমা করেছেন, বিমা করেছেন বা সঞ্চয় প্রকল্পে ঢেলেছেন, এবার তাঁদের ফের আতস কাচের নীচে আনতে চলেছে দপ্তর। তারা বলছে, নোট বাতিলের পর ইতিমধ্যে চার হাজার তথ্য জমা পড়েছে আয়কর ভবনে, যা নিয়ে এখনও নাড়াচাড়া হয়নি। বড় অঙ্কের লেনদেনের সেই তথ্য যেমন ঘেঁটে দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা, সেই সঙ্গে পুরনো হিসেবের খাতা ফের খুলে দেখার তোড়জোড় চলছে।

যাঁরা ইনকাম ট্যাক্স দেন, তাঁদের দাখিল করা হিসেবের 'অ্যাসেসমেন্ট' হয় তার পরের বছর। সেখানে যদি আয় এবং করপ্রদানে কোনও গরমিল ধরা পড়ে, তাহলে তার জন্য জবাবদিহি করতে হয় করদাতাদের। প্রয়োজনে বাড়তি কর এবং পেনাল্টিও দিতে হয়। আয়কর কর্তাদের বক্তব্য, এই নিয়মের বাইরেও আইনের একটি ধারা আছে, যেখানে পুরনো কোনও বছরের কর প্রদানের হিসেবের খাতা ফের খুলে দেখতে পারে বিভাগ। সর্বাধিক ছ'বছর পর্যন্ত পিছিয়ে গিয়ে হিসেবের খাতা নতুন করে খুলতে পারেন কর্তারা। এবার সেই অস্ত্রটিতেই শান দিতে চাইছে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট। চলতি আর্থিক বছর থেকে ছ'বছর আগে যে অ্যাসেসমেন্ট হয়েছিল, সেই হিসেবের খাতা যেমন টানা হবে, তেমনই তার পরের বছরগুলিরও আয়কর জমার হিসেব খুলতে পারে দপ্তর।

নোট বাতিলের পর ব্যাঙ্কে আড়াই লক্ষ টাকা জমা করার বিষয়ে কোনও নাক গলানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল আয়কর বিভাগ। কিন্তু তার উপরের অঙ্ক হলে, সেই তথ্য দপ্তরকে জানানোর জন্য ব্যাঙ্ক, বিমার মতো সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে কালো টাকার ঩খোঁজ শুরু করে আয়কর দপ্তর। কিন্তু পরিকাঠামো ও লোকবল না থাকায়, আড়াই লক্ষের অনেক বড় অঙ্কের দিকেই নজর দেয় তারা। কর্তারা বলছেন, গত দু'বছরে প্রায় পাঁচশো কেস তাঁরা খতিয়ে দেখেছেন, যেখানে বড় অঙ্কের লেনদেনে সন্দেহের গন্ধ রয়ে গিয়েছে। রাজ্যে এখনও বড় অঙ্কের লেনদেন সংক্রান্ত চার হাজার তথ্য জমা হয়ে রয়েছে, যেগুলি সন্দেহজনক। সেগুলিতে এখন হাত দেওয়া হয়নি। এবার সেই তথ্যগুলিকে নাড়াচাড়া করার কথা দপ্তরের।

রাজ্যে এবার আয়কর আদায় ভালো নয়। সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস চলতি আর্থিক বছরের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে, তাতে টাল খেয়েছে বাংলা। যেখানে চলতি বছরের জন্য ১৩.৩ শতাংশে হারে আদায় বৃদ্ধির টার্গেট রাখা হয়েছে, সেখানে ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে বৃদ্ধির হার মাত্র ৭.৭ শতাংশ। তাই কর আদায় বাড়াতে ঘুরপথ ধরতে চাইছে দপ্তর। এখানকার কর্তারা বলছেন, আমাদের হাতে ক্ষমতা আছে ছ' বছর আগের পুরনো কেস 'রি-ওপেন' করার। আমরা সেই দিকগুলি খতিয়ে দেখছি। কিন্তু সেটাও তো খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার শামিল। তাহলে উপায়? আয়কর কর্তারা বলছেন, বড় অঙ্কের লেনদেন হয়েছে, এমন তথ্য সংক্রান্ত যে তালিকা বিমা সংস্থা ও ব্যাঙ্কগুলি পাঠিয়েছে বা পাঠাচ্ছে, তাতে পুরনো বেশ কয়েক বছরের হিসেবও পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সেই তথ্য ধরেই এগতে চাই।