চোখে ধুলো নয়, নাকে পচা মাছের গন্ধ দিয়ে পাচারের চেষ্টা, উদ্ধার বিপুল সংখ্যক কচ্ছপ

মাছের কন্টেনার থেকে উদ্ধার হওয়া কচ্ছপ।

বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে মাছের লরি। অন্ধ্র প্রদেশ থেকে যে রকম মাছের কন্টেনারে মাছ নিয়ে আসা হয় সে রকম কন্টেনার। সেই কন্টেনারের দরজা খোলার পরও আপাত ভাবে সন্দেহ হওয়ার কিছু নেই। সারি সারি মাছের ক্রেট, আর তাতে বোঝাই করা তেলাপিয়া,ট্যাংরার মত মাছ।

কেন্দ্রীয় সরকারের বন্যপ্রাণ রক্ষা এবং অপরাধ দমন বিভাগের গোয়ে্ন্দারা বেশ কয়েক মাস ধরেই খবর পাচ্ছিলেন মাছের আড়ালে পাচার হচ্ছে সংরক্ষিত প্রজাতির কচ্ছপ। সোমবার ভোর রাতে উত্তর প্রদেশ থেকে আসা এ রকমই একটি 'কনসাইনমেন্ট' বর্ধমানে পাকড়াও করার পর মাছের গাড়ির বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য পান গোয়্ন্দারা। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার ভোররাতে বনগাঁর চাঁদপাড়াতে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আসা একটি মাছের কন্টেনার ধরেন গোয়েন্দারা।

রাজ্য সরকারের বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন,"প্রথমে কন্টেনার খোলার পর কিছুই অস্বাভাবিক পাওয়া যাচ্ছিল না।সব ক্রেটে তেলাপিয়া মাছ ভরা। কিন্তু আমাদের কাছে পাকা খবর ছিল। তাই সামনের দিকের ক্রেট সরাতে থাকি। একেবারে পিছনের দিকের ক্রেটে দেখি মাছের বদলে বস্তা। আর সেই বস্তা খুলতেই বেরিয়ে আসে কচ্ছপ।"

কন্টেনারে তল্লাশি চালিয়ে পঞ্চান্নটি বস্তায় ১২৩১ টি নিষিদ্ধ প্রজাতির কচ্ছপ উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। গ্রেফতার করা হয়েছে গাড়ির চালক সৌরভ দাসকে। গাইঘাটার বাসিন্দা ওই চালককে জেরা করে জানা গিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের সমুদ্র তীরবর্তী একটি গ্রাম থেকে তার লরিতে ওই কচ্ছপ বোঝাই করা হয়েছিল। কলকাতায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল ওই কচ্ছপ ভর্তি ক্রেট গুলো।

 তাহলে সৌরভ অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে সরাসরি কলকাতায় না এসে বনগাঁ গেল কেন?
গোয়েন্দাদের জেরায় সৌরভ দাবি করেছে বাংলাদেশ সীমান্তেও কয়েক ক্রেট কচ্ছপ সে নামিয়ে এসেছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, ঝুঁকি কমাতে আলাদা আলাদা রুটে কচ্ছপ পাচার করছে পাচারকারীরা। বন দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া কচ্ছপগুলি সামুদ্রিক প্রজাতির। এ গুলির গড় ওজন আড়াই থেকে সাড়ে তিন কিলোগ্রাম। সাধারণত বিদেশে মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে খাবার হিসাবে ওই ধরনের কচ্ছপের ভাল কদর।

সৌরভকে জেরা করে বনগাঁ এবং কলকাতায় কোথায় ওই 'কনসাইনমেন্ট' হাত বদল হওয়ার কথা ছিল তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। সেই সঙ্গে অন্ধ্র প্রদেশের বনবিভাগকেও সতর্ক করা হয়েছে। জেরায় গাড়ির চালক জানিয়েছে, অধিকাংশ সময়েই খরচ কমাতে ক্রেটে পচা মাছ দিয়ে ভরাট করে রাখে পাচারকারীরা। তাতে খরচও কমে আবার রাস্তায় রুটিন তল্লাশির সময় পচা মাছের উৎকট গন্ধের জন্য কেউই ভালো করে তল্লাশি করে না।