বিদেশিদের অনির্দিষ্টকাল আটক রাখা উচিত নয়, এনআরসি প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ


এই মুহূর্তে ভারতে কত জন বিদেশি আটক রয়েছে, কেন্দ্রের থেকে তার সংখ্যা জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সরকার যদি তাদের দেশে ফেরত্ পাঠাতে ব্যর্থ হয়, তা বলে কোনও বিদেশিকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত সরকার আটকে রাখতে পারে না।

অসমে 'অনুপ্রবেশকারী'দের বিষয়ে মানবিক দিক বিচার করে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মন্দের। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে বেঞ্চ জানায়, যদি আটক বিদেশিদের তাদের দেশে ফেরানোর জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে না পারে, তা হলে তাদের অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বন্দি করে রাখতে পারে না সরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র এবং অসম সরকার জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ৯৮৬ জন ব্যক্তিকে বিদেশি চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদেশিদের স্বদেশে ফেরানোর চূড়ান্ত তালিকা পেশের জন্য সময় চেয়ে নেন সরকারি আইনজীবী তুষার মেহতা। তিনি দাবি করেন, অন্যান্য দেশ ইতিমধ্যে চিহ্নিত বিদেশিদের নাগিরকত্ব স্বীকার করেছে। যদিও ওই বিদেশিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন মামালকারীর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উদাহরণ টেনে বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আটক অভিবাসীদের দেশে ফেরানো না যায়, তাহলে শর্তসাপেক্ষে মুক্ত করে দেওয়া উচিত তাদের।"

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ১৬ শিশু-সহ ৩১ জন রোহিঙ্গার একটি দলকে আটক করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নিরাপত্তারক্ষীরা। এ ভাবে প্রতি দিন বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরার সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে মায়ানমারের রোহিঙ্গারা। অন্য দিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করে তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অসম-সহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে। ইতিমধ্যে লোকসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে ওই বিল। সংশোধনী বিল-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল থেকে আগত অ-মুসলিম শরণার্থীরা ভারতে থাকার আবেদন করলেই মিলবে নাগরিকত্ব। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে একটা বড় সংখ্যক হিন্দু জনগোষ্ঠী অসম-সহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে প্রবেশের আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজীব গান্ধীর আমলে ১৯৮৫ সালে অসম চুক্তি অনুযায়ী এই বিল 'অসংবিধানিক' বলে দাবি তোলে অগপ-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। ওই চুক্তিতে ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত শরণার্থীরাই নাগরিকত্ব পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ে, কেন্দ্রের জাতীয় নাগরিক পঞ্জির খসড়ায় প্রকাশে একধাক্কায় ভারতের নাগরিকত্ব হারায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। উল্লেখ্য, এ দিন কেন্দ্রের থেকে গত এক দশকে চিহ্নিত বিদেশির সংখ্যা এবং তাদের স্বদেশে ফেরানো সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানাতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।