লোকসভা ভোটে অশান্তি এড়াতে প্লাস্টিক বুলেট ব্যবহার করবে সিআরপিএফ


রবার বুলেট প্রাণঘাতী নয়। কিন্তু কার্যকরীও নয়। তা দিয়ে নিশানা লাগানো খুবই কঠিন। এবার সেই রবার বুলেটের পরিবর্তে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে উঠে আসছে নতুন অস্ত্র, প্লাস্টিক বুলেট। গুলি চলবে, একেবারে নিশানাতেই লাগবে। কিন্তু লোক মরবে না। ঘায়েল হয়ে নিমেষেই কাবু হবে 'টার্গেট'। সম্প্রতি ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এর টিবিআরএল শাখা এই প্লাস্টিক বুলেট তৈরি করে বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে অশান্তি রুখতে এবং জম্মু ও কাশ্মীরে তা ব্যবহার হতে চলেছে বলে সূত্রের খবর।

২০১৪ সালে আধাসেনা দিয়েই দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল। ২০১৯-এর নির্বাচনও যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপেই হবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। আর সে জন্য প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে সিআরপিএফ। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ডিআরডিও-এর টার্মিন্যাল ব্যালিস্টিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির (টিবিআরএল) থেকে প্রচুর প্লাস্টিক বুলেট নিয়েছে সিআরপিএফ। কয়েক মাস আগে এক লক্ষ প্লাস্টিক বুলেট পাঠানো হয়েছে সিআরপিএফ-কে। আরও বুলেট তৈরির কাজ চলছে। টিবিআরএল-এর মেকানিক্যাল অফিসার সোহনলাল জানান, "সিআরপিএফ-কে এক লক্ষ বুলেট দেওয়া হয়েছে। সেগুলি এ কে ৪৭ রাইফেলে ব্যবহার করা হবে।"

ডিআরডিও-র আধিকারিকদের থেকে জানা গিয়েছে, এর আগে রবার বুলেট বানানো হয়েছিল ঠিকই। তবে সেটি সফল নয়। কারণ, বন্দুক থেকে বেরনোর সময় নলের ভিতর সেটির আকার নষ্ট হয়ে গিয়ে এলোপাথাড়ি ছুটছিল। অনেক সময় দেখা গিয়েছে পুলিশকর্মীরা কোনও যুবকের পা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছেন। কিন্তু সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মাটিতে লেগে ছিটকে সেই যুবকের চোখে ঢুকে গিয়েছে। এতে হিতে বিপরীত হয়। সে কারণেই নতুন পদক্ষেপ। টিবিআরএল-এর বিজ্ঞানী অভিষেক উপাধ্যায় জানিয়েছেন, "রবার বুলেটের থেকে এই প্লাস্টিক বুলেট অনেকটাই আলাদা। বন্দুক থেকে ছোড়ার সময় এই প্লাস্টিক বুলেটে আসল গুলির মতোই শব্দ হয়। বোঝাই যাবে না যে আসল গুলি চলছে না। তবে এগুলি শুধুমাত্র এ কে ৪৭ রাইফেলেই ব্যবহার করা যাবে। এই গুলি মূলত কাশ্মীরের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছিল। সেখানে বিক্ষোভকারীদের সামলাতে পেলেট গানের ব্যবহারে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তার জন্য এই প্লাস্টিক বুলেটের আবিষ্কার করা হয়।" অভিষেকবাবু আরও জানান, এই প্লাস্টিক বুলেটের লক্ষ্য একেবারে অব্যর্থ। রবার বুলেটের মতো এলোপাথাড়ি ছোটে না। ৫০ মিটার দূরত্ব থেকে কাউকে মারলে অগভীর ক্ষত হবে। কিন্তু তা প্রাণঘাতী হবে না। বৃহস্পতিবার থেকে পাঞ্জাবের জলন্ধরের লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসে এই প্লাস্টিক বুলেটের প্রদর্শনী হচ্ছে। প্লাস্টিক বুলেট ছাড়াও বিমানে ব্যবহারের জন্য এক বিশেষ গুলিও আবিষ্কার করেছেন ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীরা। বিমানের ভিতর হাইজ্যাকিং রুখতে অনেক সময় গুলি চালাতে হয় নিরাপত্তাকর্মীদের। কিন্তু তাতেও বিপত্তি ঘটতে পারে। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিমানের দেওয়ালে লাগলে তাতে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কিন্তু এই বিশেষ গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও বিমানে কোনও দুর্ঘটনা ঘটবে না। বিমানের দেওয়ালে লেগে সঙ্গে সঙ্গেই নষ্ট হয়ে যাবে। তবে মানুষের শরীরে সেটি আসল গুলির মতো প্রভাব ফেলবে।

সূত্রের খবর, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবারের লোকসভা নির্বাচনে অনেক রাজ্যেই গণ্ডগোলের আশঙ্কা রয়েছে। তা সামাল দিতেই সিআরপিএফ তাদের অস্ত্রাগারে প্লাস্টিক বুলেট মজুত করা শুরু করেছে।