‘সঙ্গে থাকুন, ভাল থাকুন’, এ বার মমতার চিঠি যাবে বাড়ি বাড়ি


এ বার বাড়ি বাড়ি, হাতে হাতে পৌঁছে যাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা-বার্তা।

সঙ্গে থাকুন, ভাল থাকুন! বাড়ি বাড়ি, হাতে হাতে পৌঁছে যাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা-বার্তা।

সামাজিক মাধ্যমের যুগে মোবাইল অ্যাপ বা আরও নানা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নিজেদের সংযোগের বৃত্ত তৈরি করতে সচেষ্ট নরেন্দ্র মোদী থেকে রাহুল গাঁধী সকলেই। কিন্তু কেবল প্রযুক্তির ভরসায় না থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা চিঠি পাঠাতে চান নিজের হাতে সই করে। যে চিঠি মারফত প্রাপকের হাতে পৌঁছে যাবে মুখ্যমন্ত্রীর 'ব্যক্তিগত' ছোঁয়াও। গত সাড়ে সাত বছরে তাঁর সরকারের আমলে রাজ্যের নানা কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেই ব্যক্তিগত স্তরে যোগাযোগ করে 'ধন্যবাদ' জানাতে চান স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।

সরকারি সূত্রের খবর, ২০১১ সালের ২০ মে ( যে দিন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা প্রথম বার শপথ নিয়েছিলেন) থেকে যাঁরা রাজ্যের নানা প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপক, তাঁদের সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য দ্রুত সঙ্কলনের জন্য নির্দেশ জারি হয়েছে। মুখ্যসচিব অন্যান্য দফতরের সচিবদের সঙ্গে আলোচনায় তাঁদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। এর পরে জেলাশাসকেরা নিজেদের জেলায় বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকদের ডেকে প্রস্তুতি বৈঠক করছেন। সুবিধাপ্রাপকদের কাছে কারা কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি পৌঁছে দেবেন, সেই প্রক্রিয়াই চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

গত সাড়ে সাত বছরে নানা দফতরের অধীনে অজস্র জনকল্যাণমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে মমতার সরকার। সেই সব প্রকল্পের সুবিধা সাধারণ মানুষ ঠিকমতো পাচ্ছেন কি না, জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে তার নিয়মিত খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, বিভিন্ন দফতর আলাদা ভাবে পৃথক প্রকল্পের খতিয়ান রাখে। সেই সব সংখ্যা মিলিয়ে এক জায়গায় এনে নাম-ঠিকানা দেখে বার্তা পাঠানো— এই গোটা প্রক্রিয়া যথেষ্ট শ্রমসাধ্য। লোকসভা ভোটের জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি জারি হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি পৌঁছে দিতে চাইছে প্রশাসন। সরকারি এক আধিকারিকের কথায়, ''যাঁরা এত দিন প্রকল্পের পরিষেবা পেয়েছেন, তাঁরা এ বার মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিও পাবেন।''

মুখ্যসচিব মলয় দে এই পরিকল্পনার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে লোকসভা ভোটের আগে এমন উদ্যোগে 'সরকারি খরচে রাজনৈতিক প্রয়াস'ই দেখছে বিরোধীরা। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ সরাসরিই প্রশ্ন তুলেছেন, ''কেন্দ্রীয় কোনও প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়া চিঠি এলে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষিপ্ত হন। আর নিজে সেই কাজ করলে কোনও অসুবিধা নেই?'' সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ''যাঁরা সরকারি সুবিধা পাননি, তাঁদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি গেলে বরং ভাল হত!'' কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের সচেতক মনোজ চক্রবর্তীর মন্তব্য, ''সরকারি টাকায় নিজেদের ভোটের প্রচার সেরে নিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী!''

তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় অবশ্য পাল্টা বলছেন, ''তৃণমূলের প্যাডে তো মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দেবেন না! অনেকে বলেন, আপনারা সুবিধা দিচ্ছেন কিন্তু আমরা পাচ্ছি না। এ বার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিলে সকলেই ভরসা পাবেন। সব কিছুতে খুঁত ধরা কিছু লোকের অভ্যাস!''