চুরি-ছিনতাই কমছে, চিন্তা বাড়াচ্ছে অনলাইন ক্রাইম


২০১৭-র তুলনায় ২০১৮-য় কলকাতায় সাধারণ চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে বলে লালবাজার সূত্রের দাবি। সিসিটিভির নজরদারি বাড়ানো, গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গেই অপরাধ দমন ও কিনারায় থানাগুলির সক্রিয়তা বৃদ্ধি, চুরি-ছিনতাইয়ে যুক্ত মাদকাসক্তদের মূলস্রোতে ফেরানোর ধারাবাহিক চেষ্টাতেই অপরাধ কমেছে বলে দাবি পুলিশের। তবে সাইবার ক্রাইম, ব্যাঙ্ক প্রতারণার মতো অপরাধ ক্রমেই বাড়ছে। যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশজুড়েই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সাইবার ক্রাইম ও নানাবিধ অর্থনৈতিক প্রতারণা। কলকাতাও তার ব্যতিক্রম নয়।
লালবাজারের সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগেও চুরি, ছিনতাই, বাড়ির তালা ভেঙে চুরি, রাহাজানির যা পরিসংখ্যান ছিল--গত বছর তা অনেকটাই কমেছে। বিশেষ করে ২০১৭-র তুলনায় ২০১৮ সালে প্রায় ৩০ শতাংশ অপরাধ কমেছে। চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ কমার পিছনে কলকাতা পুলিশের দাবি, তাদের 'শুদ্ধি' প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বছরখানেক আগে ছোটখাটো অপরাধে যুক্ত নেশাগ্রস্তদের নেশামুক্তি কেন্দ্রে রেখে সুস্থ করার এই প্রকল্প চালু হয়। পুলিশের দাবি, গত কয়েক মাসে এমন অনেক অপরাধীকেই সুস্থ করে বিভিন্ন কাজে যুক্ত করার ব্যবস্থা হয়েছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, 'আগে যারা চুরি-ছিনতাই করত, এখন তারা সুস্থ জীবনে ফিরে কাজ করছে। এই ব্যবস্থা চলতে থাকলে অপরাধ আরও কমবে বলেই আমাদের আশা।'

পুলিশের দাবি, গোয়েন্দা বিভাগের উপর শুধু নির্ভর না করে থানাগুলিকেও অপরাধ দমনে ও কিনারায় জোর দিতে বলা হয়েছে। ফলে থানা বা ডিভিশনগুলি বেশি সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। পাশাপাশি অফিসারদের উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কার প্রদান, সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বীকৃতি দেওয়াও ইতিবাচক ফল দিচ্ছে। একই সঙ্গে পুলিশের দাবি, আগের তুলনায় বেড়েছে সিসিটিভির সংখ্যাও। পুলিশের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও সিসিটিভি বসানো হচ্ছে। যার ফলে অনেক অপরাধের কিনারা সহজ হচ্ছে।

এই পরিসংখ্যান স্বস্তি দিলেও বাড়তে থাকা সাইবার বা অনলাইন অপরাধ চিন্তায় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে প্রতি মুহূর্তে ব্যক্তিগত জীবনের আপডেট দেওয়া, অলনাইন শপিং, অনলাইন পেমেন্টের দিকে গত কয়েক বছরে অনেক বেশি ঝুঁকেছেন সাধারণ মানুষ। সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। ম্যালওয়্যার, সোশ্যাল মিডিয়া থ্রেট (ব্লু হোয়েল গেম, সেক্সটরশন, ফিশিং), ব্যাঙ্কের নাম করে ফোন করে তথ্য হাতিয়ে প্রতারণা--এহেন অপরাধ ক্রমেই বাড়ছে।

ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে সারা দেশে ২৭ হাজার ৪৮২টি সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ দায়ের হয়। গোটা দেশেই অর্থনৈতিক অপরাধ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। ২০১৫-১৬ সালে ডেবিড কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, এটিএম, নেট ব্যাঙ্কিং প্রতারণা-সহ সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত ১৬,৪৬৮টি অপরাধের অভিযোগ জমা পড়েছিল আরবিআইতে। ২০১৪-১৫ সালে তা ছিল ১৩,০৮২ এবং ২০১৩-২০১৪ সালে মাত্র ৯,৫০০টি। পুলিশের দাবি, এ ধরনের অপরাধ রুখতে কলকাতায় বিভিন্ন ডিভিশনে সাইবার থানা তৈরি করা হচ্ছে। অতিরিক্তি অফিসার নিয়োগ করা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে সাইবার ল্যাব। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টাও চলছে বিভিন্ন ভাবে।