ব্রিটিশদের হারিয়ে মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়কে সম্মান ফিফা’র


আবার মোহনবাগান সমর্থকদের কলার তোলার সুযোগ করে দিল ফিফা৷ বৃহস্পতিবার রাতে আবু ধাবির মাঠে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিরুদ্ধে ভারত খেলতে নামার কয়েক ঘন্টা আগেই ফিফার টুইটে উঠে এল ১৯১১ সালে ব্রিটিশদের হারিয়ে মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়ের কথা৷ একই সঙ্গে টুইটে তুলে ধরা হয়েছে সেদিনের শিল্ড জয়ী মোহনবাগান দলের খেলোয়াড়দের ছবি৷

এদিন ফিফার অফিসিয়াল টুইটারে যেমন ভারত বনাম সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর ম্যাচের কথা ঘোষণা করা হয়৷ পাশাপাশি সেখানে উল্লেখ রয়েছে এশিয়ান কাপের প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ৪-১ গোলে হারানোর কথা৷ তারই রেশ টেনে যেন এই ম্যাচে জয়ের জন্য মুখিয়ে থাকবে ভারত। আর সেকথা বলতে গিয়ে একেবারে সেই শিল্ড জয়ী মোহনবাগানের গোটা টিমের ছবি দিয়ে মনে করান হয়েছে ১০৮ বছর আগে প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসেবে মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়ের এঁরাই তারকা।

ওটাই অবশ্য মোহনবাগানের ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা৷ এই ঘটনাই দেশের বাইরে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাগানের পরিচয় ঘটিয়েছিল৷ ব্রিটিশ রাজত্ব যখন গ্রাস করে ফেলেছে গোটা ভারতকে, তখন মৃতপ্রায় ভারতীয়দের নতুন করে উদ্বুদ্ধ করেছিল এই ক্লাব৷ দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে প্রথম বৃষ্টির ফোঁটার মতোই তৃপ্তিদায়ক ছিল ২৯ জুলাই দিনটি৷ খালি পায়ে ইংল্যান্ডের দল ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে ২-১ গোলে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জিতেছিলেন বাগান ফুটবলাররা৷

ইডেন গার্ডেন্সে উপস্থিত ৮০ হাজার দর্শক সাক্ষী ছিলেন সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের৷ দ্বিতীয়ার্ধে ০-১ গোলে পিছিয়ে পড়েও গোরাদের বিরুদ্ধে গোল দিয়ে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন শিবদাস ভাদুড়ি ও অভিলাষ ঘোষরা৷ বাগান তথা ভারতীয়দের সেদিনের নেতা ছিলেন শিবদাস ভাদুড়ি৷ সেদিন ময়দান থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত ফুটবলারদের মাথায় তুলে নিয়ে যান হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী৷

তবে এটাও ঘটনা ১৯১১ সালে শিল্ড জয়ের কয়েক মাস পরেই (১২ ডিসেম্বর) কলকাতা থেকে দিল্লিতে ভারতের রাজধানী সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার৷ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি মোহনবাগানের শিল্ড জয়ও এমন সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করেন৷ ১৯১১ সালে সেই জয়ী দলে ঘটি-বাঙাল নির্বিশেষে ছিলেন শিবদাস ভাদুড়ী, বিজয়দাস ভাদুড়ী, রেভারেন্ড সুধীর চট্টোপাধ্যায়, অভিলাষ ঘোষ, হীরালাল মুখোপাধ্যায়, ভূতি সুকুল, মনমোহন মুখোপাধ্যায়, নীলমাধব ভট্টাচার্য্য, রাজেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, জ্যোতিন্দ্রনাথ ( কানু ) রায়, শিরীষচন্দ ( হাবুল ) সরকারেরা৷ ব্রিটিশদের হারানো বাগানের একাদশ ভারতীয় ফুটবলে অমর একাদশ হিসেবে পরিচিত হয়ে রয়েছে৷

কথিত রয়ছে সেই দিন ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মোহনবাগানের এক খেলোয়াড়কে ডেকে জনৈক ভদ্রলোক ব্রিটিশ পতাকা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ওটা কবে যাবে?' জবাবে খেলোয়াড়টি বলেছিলেন, যেদিন মোহনবাগান ফের শিল্ড জিতবে৷ কাকতালীয়ভাবে হলেও মোহনবাগান দ্বিতীয় শিল্ড জিতেছিল ১৯৪৭ সালে৷