ডিইএলইডি পরীক্ষার চিন্তায় প্রাণ গেল শিক্ষকের! পরিবার তুলল প্রশ্ন, তোপ শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের


ডিইএলইডি পরীক্ষায় দুই পেপারের পরীক্ষা বাতিল হওয়ার চাপ হওয়ার আর নিতে পারলেন না এক শিক্ষক। যার জেরে তাঁর মৃত্য়ু হল দাবি তুলল শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ। ২০ ও ২১ তারিখে শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য নির্ধারিত ডিইএলইডি পরীক্ষার ৫০৬ ও ৫০৭ নম্বর পেপারের পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এনসিটিই স্পষ্ট করে রাজ্যগুলিকে জানিয়ে দিয়েছে চাকরি রাখতে গেলে ৩১ মার্চের মধ্যে সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষককে শিক্ষক প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট জমা করতে হবে। শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলামের অভিযোগ, ডিইএলইডি পরীক্ষা নিয়ে এমনিতেই এরাজ্যের ১ লক্ষ ৬৯ হাজার শিক্ষক মানসিক চাপে রয়েছেন। এই শিক্ষকদের মধ্যে অধিকাংশেরই বয়স ৫৫ বছরের উপরে। তারমধ্যে পরীক্ষা বাতিলে এরা প্রবলভাবে মানসিক চাপে পড়েছেন। যার জন্য এক মর্মান্তিক পরিণতি ঘটল ভাঙরের শিক্ষক হেমচন্দ্র নস্করের।

হেমচন্দ্র নস্কর নামে বছর পঞ্চান্নর এই শিক্ষকের বাড়ি ভাঙড়ে। তিনি চাকরি করতেন দক্ষিণ কাশীপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষক প্রশিক্ষণের ডিগ্রি না থাকায় তিনি অন্য শিক্ষকদের মতো এই বয়সে জাতীয় মুক্ত বিদ্যালয়ের ডিইএলইডি কোর্সে নাম লিখিয়েছিলেন এবং গত ২ বছর ধরে সেখানে ক্লাস করছিলেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ২০ ও ২১ ডিসেম্বরের দুটো পরীক্ষা বাতিল করে দেয় জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর থেকেই তিনি কার্যত চিন্তায় পড়ে যান। ৩১ মার্চের মধ্যেও আদৌ ডিইএলইডি পরীক্ষার সার্টিফিকেট আসবে কি না? এমন চিন্তায় রাতদিন ডুবে থাকতেন। যদি ৩১ মার্চের মধ্যে সার্টিফিকেট জমা করতে না পারেন তাহলে কী হবে? এই নিয়ে নাকি রাতদিন বন্ধুমহলেও আলোচনা করতেন।

হেমচন্দ্রের ভাই জানিয়েছেন, ১৯ জানুয়ারি ভোরে আচমকাই বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। কিন্তু, অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে শেষপর্যন্ত বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২০ তারিখ সকালেও হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি এমএ পাঠরত মেয়ে শান্তিকে ডিইএলইডি-র অ্যাসাইনমেন্টগুলো কী অবস্থায় আছে সে কথাও জিজ্ঞেস করেন। ২০ জানুয়ারি বাঙুরেই হেমচন্দ্রর ইকো করানো হয়। কিন্তু, এরপরই বিকেলে তিনি বিছানা থেকে পড়ে যান এবং ফের হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সন্ধে ৭.২৫টায় তাঁর মৃত্যু হয়।

পরিবারের পক্ষে হেমচন্দ্রের ভাই জানিয়েছেন, ডিইএলইডি-র পরীক্ষা নিয়ে তাঁর দাদা চিন্তায় ছিলেন এটা সত্যি। তবে বয়সের সঙ্গে শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতাও ছিল। যারমধ্যে সুগারের অস্বাভাবিকমাত্রা অন্যতম। ফলে, চাপা টেনশন তাঁর অসুস্থতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যদিও তাঁর মতে, বাঙুরে যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭ নম্বর বেডে হেমচন্দ্রকে রাখা হয়েছিল, সেই একই বেডে আরও একজন রোগীকে রেখেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই রোগী ২০ তারিখ বিকেলে মারা যান। এছাড়া ১৯ তারিখ রাতেই ১৭ নম্বর বেডের সামনেই আরও এক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। হেমচন্দ্রের ভাই-এর মতে, ডিইএলইডি-র টেনশনের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের এই ভয়াবহ চিকিৎসার পরিবেশ তাঁর দাদাকে মানসিকভাবে দূর্বল করে দিয়েছিল।

হেমচন্দ্র নস্করের এক সতীর্থ শিক্ষকেরও দাবি যে হেমচন্দ্র যারপরনাই শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। কীভাবে বাতিল দুটো পেপারের পরীক্ষা আবার দেবেন তা নিয়ে টেনশন করতেন। যদি কোনওভাবে পরীক্ষায় পাস করতে না পারেন তাহলে কী হবে? এই নিয়েও বন্ধুদের নানা প্রশ্ন করতেন হেমচন্দ্র। যদিও, হেমচন্দ্রের মৃত্যুতে তাঁর পরিবার কোনও অভিযোগ দায়ের করতে রাজি নয়। এদিকে, শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের পক্ষে রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এখনও যদি ডিইএলইডি নিয়ে রাজ্য সরকার শিক্ষকদের কথা না ভাবে তাহলে এমন আরও ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।