ট্রেনের ধাক্কা, কাঁধে হাত রেখেই বিদায় ২ বন্ধুর


কাটোয়া: অভিন্নহৃদয় বন্ধুদের ধরে থাকা হাত ছিটকে গেল ট্রেনের আঘাতে। হাতে হাতে রেখেই জীবন থেকে মৃত্যুর পথে পাড়ি দিলেন দুই বন্ধু। কাটোয়া-বর্ধমান লাইনের শ্রীখণ্ড এলাকার মর্মান্তিক ঘটনা। শীতের রাতে শিমন হেমব্রম, ফ্রানসিস্ট হেমব্রম– দুই বন্ধু একে অন্যের কাঁধে হাত রেখে রেললাইন ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। রাতের অন্ধকারে ট্রেনের হুইসল কানে গেলেও, চোখ গিয়েছিল ধাঁধিয়ে। বুঝতে পারেননি, তাঁদের হেঁটে যাওয়ার পথেই ঢুকে পড়েছে একটি ট্রেন। ট্রেনের আঘাতে দুজনে দুদিকে ছিটকে পড়েন। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ফ্রানসিস্ট। শিমনকে রেললাইন থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় বাসিন্দা নিয়ে যান কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে। সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এতটা ধকল নিতে পারেননি জখম শিমন। বর্ধমানে পৌঁছনোমাত্রই চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

শ্রীখন্ড ডাকবাংলোর কাছে আদিবাসী পাড়ায় বাড়ি শিমন এবং ফ্রানসিস্টের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু'জনেই জনমজুরের কাজ করতেন। অবিবাহিত দুই বন্ধুর ওপরেই ছিল পরিবারের দায়িত্ব। সারাদিন কাজকর্ম করার পর তাঁরা শ্রীখণ্ড বাজারের কাছে আড্ডা দিতেন। তারপর রাতে একসঙ্গে বাড়ি ফিরতেন। সোমবার রাতেও রেললাইন ধরে দুজনে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। সেসময় বর্ধমান-কাটোয়া ৩৫০২১ আপ ইএমইউ লোকাল বর্ধমান থেকে কাটোয়া যাচ্ছিল। শ্রীখণ্ড ছেড়ে আসার পর ট্রেনটি পিছন থেকে ধাক্কা দেয় দুজনকে। শিমনের আর্ত চিৎকার রেললাইন লাগোয়া বস্তির বাসিন্দাদের কানে পৌঁছায়। ছুটে গিয়ে শিমনকে উদ্ধার করেন তাঁরা। ফ্রানসিস্টের হৃৎস্পন্দন ততক্ষণে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মঙ্গলবার বিকেলে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃতদেহ সৎকার করা হয়।শোকগ্রস্ত দুই পরিবারের মানুষজনই বলছেন, 'সারাক্ষণ একসঙ্গে থাকত দুজন। শেষ সময়েও কেউ কাউকে একা ছেড়ে গেল না।' শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান দীপক মজুমদার এদিন মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সামান্য অসর্তকতায় দুটি তরতাজা প্রাণ চলে যাওয়ার ঘটনা মর্মান্তিক।`