পোশাক ছিঁড়ে নিগ্রহ তরুণীকে, প্রহৃত সঙ্গীও

সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে মারধরের ছবি।

রাতের শহর কি আদৌ নিরাপদ? পার্ক স্ট্রিট, ধর্মতলায় উৎসবের রাতে জোর পুলিশি তৎপরতা থাকলেও শহরের বাকি অংশে থাকে তো? কেউ বিপদে পড়লে পাশে দাঁড়ানোর মতো মানবিকতা শহরবাসীর আছে তো?
সোমবার, বর্ষবরণের রাতে বালিগঞ্জে এক তরুণীর যৌন হেনস্থা এবং তাঁর সঙ্গীদের রাস্তায় ফেলে মারধরের ঘটনা জানান দিল, শহর রয়েছে পুরনো অবস্থাতেই। বছর ছয়েক আগে পার্ক স্ট্রিটে গণধর্ষণের ঘটনার পরেও সে ভাবে কিছুই বদলায়নি। অভিযোগ, এখনও তরুণীর পোশাক ছিঁড়ে হেনস্থা করা হচ্ছে দেখেও এগিয়ে যাননি কেউই। তরুণীর সঙ্গীকে বাঁশ, লাঠি দিয়ে মেরে মাথা-নাক ফাটিয়ে দেওয়া হলেও দেখা মেলেনি পুলিশের। যদিও ঘটনাস্থল বালিগঞ্জ থানা থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে। 

পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, অভিযোগ পাওয়ার পরেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশন) কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ''কড়া ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।'' সুমিত পোদ্দার, রোহিত পাসওয়ান, ইন্দ্রজিৎ হালদার ওরফে হাবলা, শান্তনু মণ্ডল ওরফে ভাগনা, সোমনাথ পাত্র ওরফে পুটলি এবং বিশ্বনাথ পাত্র ওরফে লালুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে সুমিত এবং রোহিতকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করার পরে বুধবার আদালতে তোলা হয়। তাদের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। ওই দু'জনকে জেরা করেই বাকিদের খোঁজ মিলেছে। বাকিদের সঙ্গে তাদের আজ, বৃহস্পতিবার ফের আদালতে তোলার কথা।

ডিসি জানান, বর্ষবরণের রাতে হবু স্বামী, দিদি এবং এক আত্মীয়ের সঙ্গে নৈশভোজের জন্য বেরিয়েছিলেন অভিযোগকারী তরুণী। তিনি জানিয়েছেন, পদ্মপুকুর রোড ধরে রাত আড়াইটে নাগাদ গাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, পেয়ারাবাগান এলাকার আগে একটি মোড়ে গাড়ি আটকে তরুণীকে কটূক্তি করে কয়েক জন। প্রতিবাদ করলে তরুণীর হবু স্বামীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তায় ফেলে মারধর শুরু করে তারা। এর পরে তরুণী ও তাঁর দিদি চিৎকার শুরু করলে তাঁদেরও টেনে নামানো হয়। রাস্তায় ফেলে ওই দুই তরুণীর যৌন হেনস্থা করা হয়। তাঁদের পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। আরও অভিযোগ, বাধা দিতে গেলে তরুণীর হবু স্বামীকে বাঁশ এবং লাঠি দিয়ে মেরে মাথা এবং নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়। গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনও ভেঙে দেওয়া হয় বাঁশ দিয়ে মেরে। তরুণী এ দিন বলেন, ''ওকে রাস্তায় ফেলে মারছিল, মাথা ফেটে রক্ত পড়ছিল। আমাদের পোশাক ছিঁড়ে টানাটানি করছে দেখেও কেউ এগিয়ে আসেননি সাহায্য করতে।''
এর পরে কোনওমতে তরুণী ও তাঁর সঙ্গীরা থানায় পৌঁছন। তরুণী বলেন, ''ওরা গোটা রাস্তা পিছন পিছন এসেছিল। বলছিল, মেরে পুঁতে ফেলবে। কোনও মতে থানায় ঢুকেছি।''

ঘটনাস্থলের সামনেই একটি মুদির দোকান। মঙ্গলবার গিয়ে দোকানের দেওয়ালে লেগে থাকা রক্তের দাগ ধুয়েছেন সেই দোকানদার। এ দিন তিনি বলেন, ''রক্ত লেগে আছে এখনও। ভাবুন তা হলে কী কাণ্ডটা ঘটেছে!'' রাস্তায় ফেলে হেনস্থা হচ্ছে দেখেও কেউ এগিয়ে গেলেন না কেন? পাশের একটি আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ''দু'দিন ধরে জ্বর। নিজেই নড়তে পারছি না!'' আর এক নিরাপত্তারক্ষীর বক্তব্য, ''ও সব ঝামেলায় কে যাবে?''
প্রশ্ন তাই থেকেই যায়— নতুন বছরেও কি মানবিক হবে না শহর?