কাটা মুণ্ড নিয়ে ফুটবল খেলা রামুয়া ছিল এলাকার রবিনহুড !


রবিবার গভীর রাতে উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের গুলিতে খুন হয় হাওড়ার কুখ্যাত দুষ্কৃতী রামুয়া। সোদপুরের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করলেও হাওড়ার বেশ কিছু এলাকায় অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল সে। হাওড়া পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় নাম ছিল তার।

জানা গেছে, এলাকার ত্রাস হয়ে ওঠার আগে একেবারে নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলে ছিল রামুয়া। ছোটো বেলায় হাওড়া জুটমিল এলাকায় কাগজ ও প্লাস্টিক কুড়োনোর কাজ করত। পাশাপাশি একটি গ্যারেজেও কাজ করত। তার বাবা তন্ত্রসাধনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেই কাজেও সাহায্য করত রামুয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করে সে। তোলাবাজি, খুন এবং মাদক দ্রব্য পাচারসহ একাধিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে স্থানীয় এলাকায় চলত কুকর্ম। পরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে অসামাজিক কাজকর্মের পরিধি।

হাওড়া জুট মিল সংলগ্ন এলাকায় একটি খুনে নাম জড়িয়ে যায় রামুয়ার। মৃতদেহের মাথা ধড় থেকে আলাদা করে মিল সংলগ্ন এলাকায় ফুটবল খেলেছিল সে। গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর বাইরে এসে ফের শুরু হয় বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্ম। ১৯৯৮ সালের ৩১ জানুয়ারি। অজিত চৌবে নামে হাওড়ার এক মিষ্টি ব্যবসায়ীকে খুনের অভিযোগ ওঠে রামুয়ার বিরুদ্ধে। এরপর ২০১১ সালে ফের জোড়া খুনে নাম জড়িয়ে পড়ে। এমন কী, নিজের ভাইকেও খুনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এরপর ফের জেলে যায়। 

শুধু খুন বা তোলাবাজি নয়। খুন করে দেহ লোপাটের জন্য অ্যাম্বুলেন্সও ব্যবহার করত সে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া-আসা করত। পরে নির্জন এলাকায় সেগুলি ফেলে দেওয়া হত। 

এরই মাঝে দু'জন প্রোমোটারের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা তোলাবাজি করে চেন্নাই পালিয়ে যায় রামুয়া। সেখানে একটি মোবাইলের দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেছিল। পরে ফের হাওড়া পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। ২০১১ পরবর্তীতে এতটাই ত্রাস হয়ে উঠেছিল যে শিবপুর এলাকার মানুষ রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটাতেন। 

বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে রামুয়ার নাম জড়িয়ে গেলেও নিজের এলাকায় রবিনহুড হিসেবেই পরিচিত ছিল সে। নিজের একটা পরিচিতি তৈরি করেছিল রামুয়া। বস্ত্র বিতরণ, ফল মিষ্টি বিতরণের মতো সমাজসেবামূলক বেশ কিছু কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিল রামুয়া। এরপর সোদপুরের ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করে। শোনা যায়, আগে থেকেই প্রাণ ভয়ে ছিল। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।