‌শনিবারের ব্রিগেড ঘিরে নিরাপত্তার কড়াকড়ি শহরজুড়ে


আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। রাত পোহালেই ব্রিগেডে তৃণমূলের ডাকা মহাসমাবেশ। সামনের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সমাবেশ মহাগুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে দেশের রাজনীতিতে। মোদি বিরোধী জোট তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে এবারের ব্রিগেড সমাবেশ। ইতিমধ্যে নিরাপত্তা জোরদার করতে তৎপর পুলিস প্রশাসন। শনিবার ব্রিগেডে তৃণমূলের জনসভার জন্য শহর জুড়ে নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করল কলকাতা পুলিশ। শুক্রবার থেকেই দূরের জেলার তৃণমূল কর্মী, সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে আসবেন। শুক্রবার সকাল থেকেই তাই যান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার কড়াকড়ি। এদিকে, শনিবার সকাল থেকে ১০ হাজার পুলিশকর্মী, আটজন উপনগরপাল থাকবেন। কলকাতার নগরপাল রাজীব কুমার জানিয়েছেন, '‌শনিবার ভোর ৪টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পণ্যবাহী যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হবে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, এজেসি বোস রোড, হেস্টিংস রোড, ক্যাথিড্রাল রোড, হসপিটাল রোড, কুইন্স রোড, ক্যাসুরিনা অ্যাভেনিউ, লাভার্স লেনে গাড়ি পার্কিং করা যাবে না।'‌ ট্রাম চলাচলও নিয়ন্ত্রিত হবে। শনিবার সকাল থেকেই মিছিল আসবে হাওড়া থেকে ব্রেবোর্ন রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, শিয়ালদা ও ডাফরিন রোড হয়ে। দক্ষিণ কলকাতার দিক থেকে মিছিল আসবে জওহরলাল নেহরু রোড হয়ে। পার্ক সার্কাস থেকে মিছিল আসবে চার নম্বর ব্রিজ, দরগা রোড হয়ে। শ্যামবাজার হয়ে মিছিল আসবে বিধান সরণি, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে। শুক্রবার বিকেল থেকেই ব্রিগেডের দায়িত্ব একজন উপনগরপাল ও দু'‌জন সহকারী নগরপালের। ২৪টি পিকেট থাকছে। '‌জেড'‌ এবং '‌জেড প্লাস'‌ সুরক্ষায় থাকা নেতাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।
এদিকে, ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দিতে এদিন থেকেই কলকাতায় আসার কথা হেভিওয়েটদের। তালিকায় নাম রয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, লোকসভায় বিরোধী দলনেতা–সহ বেশির ভাগ রাজনীতিবিদের। শনিবারও আসবেন আরও কয়েকজন। বিমানবন্দরে তাঁদের অভ্যর্থনা এবং দেখভালের দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভাগ করে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদদের উপর। যেমন– শুক্রবারই আসছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া। তাঁকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুকে অভ্যর্থনা জানাবেন দীনেশ ত্রিবেদী। লোকসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে ব্রাত্য বসু ও রতন দে। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে অর্জুন সিং, জম্মু–‌কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাকে সাংসদ নাদিমুল হক, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে সন্ধ্যারানী টুডু, অরুণাচল প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গেগং আপাংকে মমতা সঙ্ঘমিত্রা। এছাড়া প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা যশোবন্ত সিনহাকে পূর্ণেন্দু বসু, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজিত সিংকে দীনেশ বাজাজ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ শৌরিকে সাংসদ মণীশ গুপ্ত, বিজেপি সাংসদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শত্রুঘ্ন সিনহাকে সাংসদ শতাব্দী রায়, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শারদ যাদবকে সব্যসাচী দত্ত। এছাড়াও শুক্রবারই আসছেন অসমের সাংসদ তথা এআইইউডিএফের নেতা বদরুদ্দিন আজমলও। এরপর শনিবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে অভ্যর্থনা জানাবেন সাংসদ ডেরেক ও'‌ব্রায়েন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রফুল প্যাটেলকে সাংসদ সৌগত রায়, জম্মু–‌কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাকে মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান, বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবকে সমীর চক্রবর্তী। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শারদ পাওয়ারকে অভ্যর্থনা জানাবেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও রতন দে, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীকে সাংসদ সুদীপ ব্যানার্জি, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারান্ডিকে মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি। এঁরা প্রত্যেকেই গ্র‌্যান্ড হোটেল, তাজ বেঙ্গল, গ্রেট ইস্টার্ন ও পিয়ারলেস ইনে থাকবেন।‌‌ তাই ওই হোটেল চত্বরেও ব্যাপকভাবে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কোথাও যেন কোনও ঘাটতি না থাকে সেদিকে নজর প্রশাসনের। পাশাপাশি ব্রিগেডে মঞ্চ প্রস্তুতেও দেওয়া হচ্ছে বিশেষ নজরদারি। জানা গিয়েছে, সমাবেশের দিন মোট পাঁচটি মঞ্চ তৈরি করা হবে। সব মিলিয়ে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তে চলেছে এই ব্রিগেড থেকেই। আর তাই বিরোধী জোটের এই সমাবেশ সফল করতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল কংগ্রেস।‌‌‌