লিভ ইন সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত না গড়ালেই তা ধর্ষণ নয়, রায় শীর্ষ আদালতের

সুপ্রিম কোর্ট।

লিভ ইন সম্পর্ক নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত শীর্ষ আদালতের। আদালত জানিয়েছে, দু'জনের সম্মতিতেই লিভ ইন সম্পর্ক হয়। সে ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মতি থাকে দু'পক্ষের-ই। তাই পরিস্থিতির শিকার হয়ে বা কোনও গুরুতর কারণে পুরুষ সঙ্গী যদি বিয়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মামলা হতে পারে, ধর্ষণের নয়। তবে গোড়া থেকে পুরুষসঙ্গীর অভিসন্ধিতেই যদি গলদ থাকলে ধর্ষণের মামলা দায়ের করতে পারবেন মহিলারা।

প্রায় দু'দশক আগে সহকর্মী ডাক্তারের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস এবং ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন মহারাষ্ট্রের এক নার্স। তাঁর দাবি ছিল, স্বামী বিয়োগের পর একাকীত্বে ভুগছিলেন তিনি। সেইসময় সহকর্মী ডাক্তারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর। একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু পরে অন্য একজনকে বিয়ে করেন ওই ডাক্তার। এফআইআর-টি বাতিলের আর্জি নিয়ে বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত ওই ডাক্তার। সেখানে তাঁর আর্জি খারিজ হয়ে গেলে শীর্ষ আদালতে আবেদন করেন তিনি। বুধবার বিষয়টির শুনানি করছিল বিচারপতি একে সিকরি এবং এস আব্দুল নাজিরের ডিভিশন বেঞ্চ।

সবকিছু খতিয়ে দেখে বিচারপতিরা জানান, ''ধর্ষণ এবং সম্মতিক্রমে শারীরিক সম্পর্কের মধ্যে যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। অভিযুক্ত সত্যি সত্যিই বিয়েতে ইচ্ছুক ছিল কি না, তা আগে খতিয়ে দেখা উচিত। বুঝতে হবে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটাতে ইচ্ছাকৃতভাবে অভিযোগকারিণীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে কি না। দ্বিতীয়টি হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। কিন্তু যদি তা না হয়, তাহলে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মামলা দায়ের করা যেতে পারে, ধর্ষণের নয়।''

অভিযোগকারিণী নার্সকে উল্লেখ করে আদালত জানায়, ''সহকর্মী ডাক্তারের প্রেমে পড়েছিলেন বলে নিজে মেনেছেন অভিযোগকারিণী। একাকীত্ব ঘোচাতে স্বেচ্ছায় তাঁর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। অনেকদিনই একসঙ্গে ছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রেমিকের বিয়ের খবর জানতে পেরে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ধর্ষণের প্রশ্নই ওঠে না। কারণ কোনওরকম চাপসৃষ্টি করাই হয়নি তাঁর উপর। বরং নিজের ইচ্ছতেই ওই সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। শারীরিক সম্পর্কেও পূর্ণ সম্মতি ছিল তাঁর।''

আদালতের যুক্তি, অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয় যে ভুয়ো আশ্বাস নয়, শুধুমাত্র ভালবাসা এবং আবেগের বশে পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন মহিলারা। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখা দিলে অনেক সময় বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় না ওই সম্পর্ক। বিয়ের ইচ্ছে থাকলেও প্রতিকূল পরিস্থিতির জেরে সরে দাঁড়াতে হয় পুরুষ সঙ্গীকে। সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলা দায়ের করা যায় না। কারণ অনিচ্ছাকৃত প্রতিশ্রুতি পালন করতে না পারা এবং জেনে শুনেবিশ্বাসঘাতকতা, দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।